পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৬১০ জনে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।
এর আগে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান (আরটিএ) নিহতের সংখ্যা ৫০০ বলে নিশ্চিত করেছিল। তালেবান সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, শুধুমাত্র কুনার প্রদেশেই ‘শত শত মানুষ’ নিহত হতে পারে। পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল জালালাবাদের ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে এবং ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ধরা পড়েছে ৬.০।
আফগান তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কুনার প্রদেশের নূর গাল, সাওকি, ওয়াতপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি এবং উদ্ধারকারী দলগুলো ওইসব এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা এ ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ভারপ্রাপ্ত আফগান প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “দুঃখজনকভাবে, আজ রাতের ভূমিকম্পে আমাদের কয়েকটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা উদ্ধার তৎপরতায় নেমেছেন এবং কেন্দ্রীয় ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলো থেকেও সহায়তা দল ঘটনাস্থলের পথে রয়েছে।
এদিকে ইউএসজিএস জানিয়েছে, মূল ভূমিকম্পের পর একই এলাকায় অন্তত আরও দুটি শক্তিশালী আফটারশক আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে একটি ছিল ৫.২ মাত্রার। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বেশ কয়েক সেকেন্ড কম্পন টের পাওয়া যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর থেকে অন্তত আরও তিনটি কম্পন হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল চার দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক দুই এর মধ্যে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বেশ কয়েক সেকেন্ড কম্পন টের পাওয়া যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
দেশটির তালেবান সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডজনখানেক ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা মানবিক সংস্থাগুলোকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এসব এলাকার বেশ কিছু স্থানে ভূমিধস ও বন্যার কারণে আকাশপথ ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে সেখানে পৌঁছাতে পারছে না উদ্ধারকর্মীরা।
আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
এই ভূমিকম্পের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আহতদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই আহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। উদ্ধারকাজে যুক্ত তালেবান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শুধু এই একটি উপত্যকাতেই ‘শত শত মানুষ’ নিহত বা আহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কুনার প্রদেশ। কেননা, ভূমিধসের কারণে সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন: