আপনি কি কখনও শুনেছেন— “মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে”?
এই ধারণাটি বহুদিন ধরে জনপ্রিয়, সিনেমা থেকে শুরু করে সেলফ-হেল্প বই—সবখানেই এর উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি পুরোপুরি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান বহু আগেই প্রমাণ করেছে যে আমরা আসলে মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করি।
আজকের উন্নত প্রযুক্তি, যেমন fMRI (ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) এবং PET স্ক্যান (পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি) স্পষ্টভাবে দেখায়—আমরা যখন হাঁটি, কথা বলি, ভাবি এমনকি ঘুমাই—তখনও মস্তিষ্কের প্রায় সব অংশ সক্রিয় থাকে।
যদি সত্যিই মস্তিষ্কের ৯০% অকার্যকর হতো, তবে কোনো ছোট আঘাত আমাদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলত না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়।
ফ্রন্টাল লোব → পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া ও যুক্তিবোধ
টেম্পোরাল লোব → ভাষা ও স্মৃতি
প্যারাইটাল লোব → সংবেদন প্রক্রিয়াকরণ
অক্সিপিটাল লোব → দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ
প্রতিটি অংশ অর্কেস্ট্রার মতো সমন্বয় করে কাজ করে। কোনো অংশ থেমে গেলে পুরো সিস্টেমেই গোলযোগ দেখা দেয়।
মস্তিষ্ক শরীরের মোট ওজনের মাত্র ২%, কিন্তু এটি প্রায় ২০% শক্তি ব্যবহার করে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এত ব্যয়বহুল একটি অঙ্গের বিশাল অংশ অকেজো থাকা সম্ভব নয়।
আমরা হয়তো সবসময় মস্তিষ্কের পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করি না। নতুন কিছু শেখা, দক্ষতা অর্জন বা সৃজনশীল চিন্তার মাধ্যমে আমরা এর কার্যকারিতা বাড়াতে পারি। এই ক্ষমতাকে বলা হয় নিউরোপ্লাস্টিসিটি। তবে এর মানে এই নয় যে মস্তিষ্কের কোনো অংশ একেবারেই অব্যবহৃত থাকে।
সুতরাং, “আমরা মস্তিষ্কের মাত্র ১০% ব্যবহার করি”—এটি আসলে একটি মিথ। বাস্তবতা হলো, আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনকে চালিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে।