শিরোনামঃ
ভাঙ্গায় অবরোধের প্রধান সমন্বয়ক আটক ফরিদপুরে সড়ক অবরোধকারীরা বিকেলের মধ্যে না সরলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র বিতরণ শুরু নৌবাহিনী প্রধানের সঙ্গে মালদ্বীপের সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ কক্সবাজারে স্বামীকে হত্যার পর স্ত্রীকে ধর্ষণ: অভিযুক্ত আটক লাখ টাকা ধার করে স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মহননকারী মিনারুলের চল্লিশা করলো পরিবার টাকা দিলেই মিলছে ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য জনতার মঞ্চ নিয়ে ‘বাতিল’ মামলা ফের চালু হচ্ছে: দেড় শতাধিক সাবেক আমলাকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা এশিয়ায় ঘুরছে জেনজির শনি: রিন্টু আনোয়ার কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীনের দাফন কুষ্টিয়ায়
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩৪ অপরাহ্ন

এশিয়ায় ঘুরছে জেনজির শনি: রিন্টু আনোয়ার

রিন্টু আনোয়ার / ৩৩ বার
প্রকাশ: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জেনজি তারুণ্যের আন্দোলনের তোড়ে তছনছ প্রতিবেশী দেশগুলোর  ফ্যাসিস্টরা। এখন পর্যন্ত মুক্ত কেবল ভারত। তবে শঙ্কামুক্ত নয়। ঘুরছে শনির চক্করের মতো প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আধুনিক সংযুক্তিতে বেড়ে ওঠা এক নতুন প্রজন্ম, জেনারেশন-জেড। তাদের ক্ষোভের সর্বশেষ শিকার নেপালের একরোখা সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ছিল এই বিক্ষোভের সূচনা। তা অল্প সময়ের মধ্যেই রূপ নেয় দুর্নীতিবিরোধী অভ্যুত্থানে। তাদের চাপে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা বা শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসের মতো পরিণতি হয় নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলিকে।

গত কয়েক বছর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে উথাল-পাথাল শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা একের পর এক সরকারকে গদিছাড়া করছে জনগণ; আরও নির্দিষ্ট করে বললে জেনারেশন জেড বা তরুণ প্রজন্ম। এর ধারা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে; এরপর বাংলাদেশ, সবশেষ যোগ হয়েছে নেপাল। আরো মজার বিষয় হচ্ছে মাসের সিরিয়াল। শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে সরকারের পতন হয়েছিল জুলাই মাসে, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন হয় আগস্ট মাসে, আর নেপালে ওলি সরকারের পতন হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে।

দেশে দেশে বেড়ে ওঠা জেনজির জন্ম নব্বেই দশকের শেষ থেকে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর মধ্যে। কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করে তাদের চাওয়া বৈষম্য অবসান, সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং চিন্তার স্বাধীনতা। নেপালের ঘটনা একদম নতুন বা আকস্মিক নয়। বাংলাদেশে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন দ্রুত রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা পরাক্রমশালী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেয় তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে জান বাঁচান। এর আগে, শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতি এবং লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে রাস্তায় নামে  তরুণরা। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অনুরা কুমারা দিশানায়েকের নেতৃত্বে বামপন্থি জোট ক্ষমতায় আসে। এর পর যোগ হলো নেপাল পর্ব।

ধারাবাহিক এ কয়েকটি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জেন-জেড এখন কেবল আর দর্শক নয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের বড় চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। প্রতিবেশি প্রভাবশালী দেশ ভারতের করদরাজ্যের মতো ছিল জেনজির তোড়ে পড়া দেশগুলো। ভারতের জন্য এটি হলুদ সংকেত। এরইমধ্যে নেপালের সহিংসতা ও প্রাণহানির নিন্দা জানিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে উন্মুক্ত সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আশঙ্কা নেই দাবি করলেও ভারতের এমন সতর্কতা প্রকারান্তরে  আশঙ্কার বার্তাই দেয়।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ মাড়িয়ে নেপালের এ অস্থিরতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে নতুন চাপে ফেলেছে। তা ভারতের নিরাপত্তা, আঞ্চলিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যের ওপর প্রভাব না ফেলে পারে না। এই নতুন প্রজন্মের তরুণরা যেভাবে একের পর এক দেশের শাসনব্যবস্থায় কাঁপন ধরাচ্ছে তা যে-কোনো গতানুগতিক শাসনব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের জন্ম দিতে পারে। দেশগুলোতে ক্ষোভের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একেক দেশে একেক রকম। তবে, তেতে ওঠার দৃশ্যপটে বেশ মিল। বাংলাদেশে এক বছর আগেই ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পতন ঘটে ফ্যাসিবাদী সরকারের। সেই আন্দোলনেরই অনুরণন নেপালে। সূচনাটা একটু ব্যতিক্রম। গেল বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ আন্তর্জাতিক সব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে দেশে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কিন্তু নির্দেশ মানেনি এসব প্রতিষ্ঠান। এর জেরে চলতি বছরে সরকার আকস্মিকভাবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এক্স নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অথচ নেপালে শুধু ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের সক্রিয় ব্যবহারকারীই প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। তাদের অনেকেই ব্যবসা, শিক্ষা কিংবা দৈনন্দিন যোগাযোগে পুরোপুরি নির্ভরশীল এই প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর। হঠাৎ করে এগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছোট উদ্যোক্তারা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রাস্তায় নামে। তরুণরা স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে প্রতিবাদ শুরু করে। প্রথমে আন্দোলন ছিল কেবল সোশ্যাল মিডিয়া খোলার দাবিতে। কিন্তু দ্রুত সেটি রূপ নেয় দুর্নীতি ও সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে। ফলাফল শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের মতো ক্ষমতাশালী ফ্যাসিস্ট সরকারের অবিশ্বাস্য পতন।

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক পতন থেকে গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন থেকে সরকারের পতন আর নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা থেকে বিদ্রোহে সরকার পতন। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাস প্রমাণ করেছে— যেখানে জনগণের আস্থা ভেঙে পড়ে, সেখানেই ক্ষমতাধর শাসকের পতন অনিবার্য।

এখন প্রশ্ন, দক্ষিণ এশিয়ার এই তরঙ্গ থামবে কোথায়? অক্টোবর কি সত্যিই নতুন কোনো সরকারের পতন দেখতে যাচ্ছে? নাকি এই ডমিনো ইফেক্ট অন্য কোনো দিকে মোড় নেবে? উত্তর সময়ই দেবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়— তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্বরকে অবহেলা করলে যে কোনো সরকার বিপদের মুখে পড়বেই। আর তাই উৎসুক মহলে এখন অপেক্ষা, এরপর এর শিকার হবে বা হতে পারে কোন দেশ? দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র কি  নতুন কোনো অঙ্কণে যাচ্ছে? এক সময় যেসব সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিল, একের পর এক সেই সরকারগুলোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে জেন-জি’র তারুণ্যের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে- এ আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন জেড বা জেন-জি। তাদের ভাষা, স্লোগান, আন্দোলন ও রাস্তায় নামার নমুনা প্রায় অভিন্ন। একটি ধারাবাহিকতা লক্ষনীয়। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে সরকারের পতনের মাধ্যমে এ ধারা শুরু হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় ঘটে। সবশেষ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলিকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশেই একই চিত্র—অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং তরুণদের অসন্তোষ মিলেমিশে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পতনের সূচনা অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশটি ভয়াবহ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সংকটে পড়ে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন, পর্যটন খাতের ধস, দুর্নীতি এবং অদূরদর্শী নীতির ফলে দেশটি দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। ‘গোটা গো হোম’ আন্দোলনের স্লোগানে গোতাবায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে কলম্বো কেঁপে ওঠে। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট হাউস দখল করে তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র তছনছ করে। অবশেষে পালিয়ে গিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন গোতাবায়া। এক পরিবারের আধিপত্য ভেঙে নতুন অধ্যায় শুরু হয় দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে। বাংলাদেশে মহাশক্তির আয়রন লেডি খ্যাত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের চূড়ান্ত সূচনা ২০২৪ সালের জুলাইতে।  সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমদিকে সরকার দমননীতি চালালেও পুলিশের গুলি, নিহতদের সংখ্যা ও সহিংসতা আন্দোলনকে আরও ঘনীভূত করে। ধীরে ধীরে এ আন্দোলন সরাসরি শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী আন্দোলন দমনে অস্বীকৃতি জানালে হাসিনা রাজনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন। ৫ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। শিক্ষার্থী জেনজির পছন্দে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নেপালের চিত্রের বেশ কিছু অংশে বাংলাদেশের সঙ্গে মিলেছে। দেশটিতে তরুণদের দুই দিনের বিক্ষোভের পর ‘পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ’ নিয়েছে সেনাবাহিনী।  তারা আহ্বান জানিয়েছে সবােইকে শান্ত থাকতে। একতাবদ্ধ থাকতে। বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, ‘জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করতে এবং জনজীবন স্বাভাবিক করতে। সেখানেও আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর ওপর প্রেসিডেন্টের অবস্থান। তবে তরুণ আন্দোলনকারীরা তাঁকে মেনে নিচ্ছেন না। ফলে তাঁকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নেপালের দায়িত্বে থাকলেও কার্যত দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাস প্রমাণ করেছে যেখানে জনগণের আস্থা ভেঙে পড়বে, সেখানেই ক্ষমতাধর শাসকের পতন অনিবার্য। আর যুগের বিশেষ গেমচেঞ্জার জেনারেশন জেড।
ভারতের অবস্থা এখনো ভিন্ন। কিন্তু উদ্বেগ ব্যাপক। তা ধরে রাখতে পারেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের ঘটনায় শোক ও উদ্বেগ জানাতে গিয়ে বলেছেন, এই প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে শিবসেনার এক এমপির হুঁশিয়ারি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কৌতুহল জাগিয়েছে। ভারতের ব্যাপারেও একই সতর্কবার্তা দিলেন শিবসেনা নেতা ও সংসদ সদস্য সঞ্জয় রাউত। তিনি বলেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা যদি এখনই নিজেদের না সামলায়, তবে নেপালের মতো পরিস্থিতি এ দেশেও দেখা দিতে পারে। সঞ্জয় রাউতের দাবি, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারও গভীরভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। ভারতের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কারও সন্তান দুবাই-সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছে, কেউ আবার ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছে— এটাই বাস্তব। নেপালকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে সঞ্জয় রাউত বলেন, একসময় নেপাল আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, তারা ভারতকে বড় ভাই মনে করত। কিন্তু তাদের সংকটে ভারত সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। এটিই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির স্পষ্ট ব্যর্থতা। ভারতের রাজনীতি-কূটনীতি-ব্যবসায়ী সব ঘরানেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। এদিকে ভারতের প্রাচীন গণমাধ্যম সামনা-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, নেপালের অস্থিরতা থেকে ভারতের শিক্ষা নেওয়া উচিত। এই অস্থিরতার কারণ হলো বেকারত্ব এবং মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ। এটি ভারতের জন্যও বিপদজনক, কারণ ভারতেও একই ধরনের সমস্যা যেমন কর্মসংস্থান হ্রাস এবং গণতন্ত্রের দুর্বলতা রয়েছে।

 

 

সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও একই ধরনের আঞ্চলিক অস্থিরতা দেখা গেছে। মহারাষ্ট্রে প্রকাশিত মারাঠি ভাষার সংবাদপত্রটি ভারতের বৈদেশিক নীতির সমালোচনা করে বলেছে যে, নেপালের চীনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেপালের ভূখণ্ডের দাবি এবং সাম্প্রতিক প্রতিবাদগুলোও ভারতের উদ্বেগের কারণ।বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঘটে যাওয়া আগের অস্থিরতা ও প্রতিবাদের দিকে ইঙ্গিত করে সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, ক্ষুধা, বেকারত্ব এবং দুর্নীতির সমস্যা সমাধান করা হয়নি, যার ফলে সংসদ ‘জনগণের কাছে অকেজো’ হয়ে পড়েছে। নেপালের ‘আগুন’ মূলত বেকারত্ব এবং ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ থেকে তৈরি হয়েছে এবং ভারত এর থেকে একটি ‘শিক্ষা’ নিতে পারে। এতে সতর্ক করা হয়েছে যে, বেকারত্ব, ‘গণতন্ত্রের ধ্বংস,’ এবং ক্রমবর্ধমান জাতি ও ধর্মের রাজনীতি দেশটির জন্য খুবই বিপজ্জনক।

ভারতে ১৯৫০ থেকে আজ অবধি সব রাজ্যে, কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে সেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস কিন্তু চলে যাচ্ছে বা সরকার এমন কিছু করছে, যাতে করে মানুষ মনে করছে আমার ভোটে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। আর তাই এই মুহূর্তে ভারতে ওই দেশগুলোর মতো একটা সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম হলেও একেবারে নেই, এ কথা বলা যাবে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া এই আগুন ভারতে জ্বলবে না, তেমন গ্যারান্টি কিন্তু কেউ দিতে পারবে না।
……
লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com


এ জাতীয় আরো খবর...