প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০২৩ সালের নভেম্বরে হামাসের হাতে আটকদের মধ্যে ১১০ জন বন্দি মুক্তির চুক্তি হলেও, মাত্র এক সপ্তাহ পর নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি বাড়াতে অস্বীকার করেন। ফলে বাকি বন্দিরা গাজায় থেকেই যান। এরপর থেকে প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই যখন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, নেতানিয়াহু নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে বা লক্ষ্য পরিবর্তন করে তা আটকে দিয়েছেন।
২০২৪ সালের মে মাসে হামাস একটি প্রস্তাবে রাজি হলেও ইসরায়েল প্রস্তাবটি এড়িয়ে রাফাহ শহরে অভিযান চালায়। সেপ্টেম্বরে মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরায়েলের স্থায়ী নিয়ন্ত্রণের নতুন শর্ত দেন নেতানিয়াহু। কায়রো ও হামাস উভয়ই এটি প্রত্যাখ্যান করে।
মিত্র দেশগুলোর চাপও নেতানিয়াহু পাশ কাটিয়ে গেছেন। একই বছরের মে মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহু নীরব থাকেন, ফলে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের চাপে ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হন নেতানিয়াহু। কিন্তু মার্চেই ইসরায়েল একতরফাভাবে বোমাবর্ষণ পুনরায় শুরু করে। গত সপ্তাহে দোহায় মার্কিন সমর্থিত নতুন আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েল হামলা চালায়, ফলে আলোচনা কার্যত ভেস্তে গেছে।
নেতানিয়াহুর কৌশল হচ্ছে একাধিক স্বার্থকে একসঙ্গে চালু রাখা। তার সরকার টিকে আছে অতি-ডানপন্থীদের সমর্থনের ওপর, যারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যুদ্ধ থেমে গেলে তারা জোট থেকে বেরিয়ে আসবে। এতে সরকারের পতন নিশ্চিত হবে। এই গোষ্ঠীর লক্ষ্য গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন।
দেশের ভেতরেও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে। ক্ষমতায় থাকা তার জন্য সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। ফলে তিনি এমন এক ভারসাম্য তৈরি করে রেখেছেন যেখানে যুদ্ধ থামছেও না, আবার শেষও হচ্ছে না।
২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে ইসরায়েলে নির্বাচন হওয়ার কথা। নেতানিয়াহু আশা করছেন তখন পর্যন্ত যথেষ্ট “সাফল্য” দেখাতে পারবেন, যেমন হামাসকে দুর্বল করা, হিজবুল্লাহকে প্রতিহত করা, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা। এসব দিয়ে অতি-ডানপন্থীদের ওপর নির্ভর না করেই তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেন।
কিন্তু বিকল্প ছবিও স্পষ্ট। দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ইসরায়েলের ভেতরে এবং বাইরে চাপ বাড়াবে। তখন হয় তাকে যুদ্ধ থামাতে হবে, নয়তো নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে হবে। এরই মধ্যে এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে গাজার মানুষ। প্রায় ৬৪ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, পাশাপাশি প্রায় দুই বছর ধরে বন্দিদশায় রয়েছে ইসরায়েলি নাগরিকরা।