আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও যারা ক্লিন ইমেজের এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সহিংসতার অভিযোগ নেই, তারা জাতীয় পার্টিতে যোগ দিলে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে জানিয়েছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেছেন, মব সন্ত্রাস সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বিভাগীয় প্রতিনিধিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসিরসহ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কো-চেয়ারম্যান মোস্তফা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থক কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। সে যদি যোগ্য প্রার্থী আমরা মনে করি, আমরা দেব না কেন; অবশ্যই দেব। আমাদের ক্যান্ডিডেট ক্রাইসিসকে ওভারকাম করার জন্য আমরা অবশ্যই করব।’
তিনি বলেন, ‘৩০০ আসনে আমরা প্রার্থী দেব।
এখন জাতীয় পার্টির প্রার্থীর চাইতে যদি ভালো শক্তিশালী প্রার্থী পাওয়া যায়, তার যদি ক্লিন ইমেজ থাকে এবং তার বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতার কোনো আলামত না থাকে, তাহলে দেব না (মনোনয়ন) কেন, অবশ্যই দেব। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ অন্য জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে। সেখানে যদি ক্লিন ইমেজের লোক যদি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন, তাহলে তাদের আমরা মনোনয়ন দেব।’
জাপার এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি এবং এ ধরনের মব ভায়োলেন্স-এ নাই তাদের বাঁচানোর জন্য বিএনপির একটা ভূমিকা থাকতে হবে।
তা না হলে বিএনপি একা হয়ে যাবে। সামনে যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি না থাকে তাহলে ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ দলগুলো থাকতে চায়; আরেক দিকে থাকতে চায় বিএনপি। এখন তারা যদি বলে পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাব না, তখন তারা যদি সরে দাঁড়ায় তাহলে বিএনপি একা হবে। তাহলে একক নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপিকে বিপদে ফেলার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা কিন্তু চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, তারা দেখছে বিএনপি তো এগিয়ে আছে, তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে। এখন বিএনপিকে আঘাত করতে গেলে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না জামায়াতে ইসলামী। এ রকম একটা খোঁড়া অজুহাত খুঁজে বিএনপিকে বিপদে ফেলার চেষ্টা চলছে। এ জন্য সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিএনপিকে জাপার মহাসচিব এমন কথা বলতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মব সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে, তাতে জনগণের মনে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি সরকারই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তবে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে?’
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, দল সব সময় গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি করেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছে। তাই আগামী নির্বাচনেও দলটি অংশ নেবে বলে জানান তিনি। তবে এ জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন মোস্তফা।
প্রতিনিধিসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আসন্ন নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সৎ, ক্লিন ইমেজের অনেক নেতা জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
সভা শেষে দলীয় নেতাকর্মীরা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় নেতারা অভিযোগ করেন, দলীয় অফিস ও নেতাকর্মীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে দল ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মব সন্ত্রাস সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি আরো দাবি করেন, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে শক্তিশালী উপস্থিতি নিয়ে অংশ নেবে এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে আপসহীন ভূমিকা পালন করবে।
রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সভায় বক্তব্যে দলটির কো-চেয়ারম্যান বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অন্যদিকে প্রার্থী তালিকা ও সাংগঠনিক প্রস্তুতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।