মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

খুন হলেন মামুন ২৯ বছর আগের হত্যা মামলার হাজিরা দিতে এসেই

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১ বার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

প্রায় ২৯ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ হাজিরা দিতে আসেন তারিক সাইফ মামুন (৫৫)। ফেরার পথে সোমবার বেলা ১১টার দিকে আদালতপাড়ার কাছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তিনি খুন হন।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর পেশকার মো. শাহিন সাংবাদিকদের জানান, মামুন সকালে প্রায় ২৯ বছর আগের একটি হত্যা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এক মামলার পরই মামুনের মামলার ডাক আসে। তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাজিরা দেন। তবে কোনো সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। হাজিরা শেষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে মামুন আদালত ত্যাগ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, হাসপাতালের প্রবেশমুখে হঠাৎ দুই দুর্বৃত্ত তার পেছনে এসে খুব কাছ থেকে একাধিক গুলি চালান। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হামলাকারীরা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

হাসপাতালটির একটি সিটিভিতে ঘটনাটি ধরে পড়ে। সিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, মামুন ১০টা ৫৩ মিনিটে হঠাৎ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন দুই ব্যক্তি তার ওপর একাধিক গুলি চালান। মাত্র তিন থেকে চার সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটনাটি ঘটে, এরপর গুলিবর্ষণকারীরা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।

মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা মামলার নথি অনুসারে, ১৯৯৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় জাহিদ আমিন ওরফে হিমেল (২৫) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলে হিমেলের বন্ধু সাইদ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। নিহতের মা জাফরুন নাহার তখন সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।

পুলিশ তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিক সাইফ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ওসমান, মাসুদ ওরফে নাজমুল হোসেন, রতন, ইমন ও হেলাল। আজ এ মামলারই হাজিরা ছিল।

রাজধানীর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইয়াসিন বলেন, গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, নিহত তারিক সাইফ মামুন একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। পরে তাদের মধ্যে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। মামুন একসময় হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। ‘ইমন-মামুন বাহিনী’ নামে তারা পরিচিত ছিলেন।

ইমন ও মামুন দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মামুনের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া মামুন রাজধানীর বাড্ডায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী বিলকিস আক্তারের সঙ্গে বসবাস করতেন।

বিলকিস আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমরা ধারণা করছি ইমনের লোকজনই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর আগেও তারা মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।


এ জাতীয় আরো খবর...