গাজা সিটিতে আবারও ভয়াবহ বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। একের পর এক বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে শহরের আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে ধ্বংসস্তূপ আর আতঙ্কের ছায়ায়। এ অবস্থায় হাজারো মানুষ বাধ্য হচ্ছেন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে। অনেকেই বলেছেন—“নিশ্চিত মৃত্যু থেকে আমরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছি।”
ইসরায়েলি সেনারা দাবি করছে, তারা হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করছে। একই সঙ্গে বারবার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে যে গাজার বাসিন্দারা যেন দক্ষিণে চলে যায়, যেখানে “মানবিক অঞ্চল” তৈরি করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। দক্ষিণ গাজাতেও নেই নিরাপদ আশ্রয়, নেই যথেষ্ট খাদ্য, পানি কিংবা চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে যারা সেখানে যাচ্ছেন, তারাও আবার নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়ছেন।
জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এভাবে সাধারণ মানুষকে বারবার স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে, অথচ কোনো জায়গাকেই পুরোপুরি নিরাপদ বলা যাচ্ছে না। স্থানীয় হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যে রোগী এবং হতাহতদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ওষুধ, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
গত কয়েক দিনের হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেক পরিবার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে; কেউ বাবা-মাকে হারাচ্ছে, কেউ আবার সন্তানদের কবর দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল দাবি করছে তারা সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু এর প্রকৃত মূল্য দিচ্ছে গাজার নিরীহ সাধারণ মানুষ। যুদ্ধের আইন ও আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালা অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে গাজায় ঘটছে তার উল্টো।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হাজারো পরিবার সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে রাতের অন্ধকারে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়ছে। কিন্তু যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই নতুন আতঙ্ক, নতুন বোমা, নতুন মৃত্যু তাদের ঘিরে ধরছে।
সাম্প্রতিকতম হামলায় ৬০-৭০ শতাংশ দুর্গত এলাকাবাসী গাজা সিটি থেকে পালিয়ে গেছে বলে ইসরায়েলের দাবি; তবে UN ও স্থানীয় সূত্র বলছেন, যাঁরা পালাচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা কম এবং অনেকেই নির্দিষ্ট নিরাপদ-অবস্থান না বলে হয়রানিতে পড়ছেন।
করণীয় – কীভাবে পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল হতে পারে
তারুণ্য ও স্বল্পসময়ের সহায়তা বাড়ানো — খাদ্য, পানি, ওষুধ ও আশ্রয়-শিবির দ্রুত পৌঁছাতে হবে।
বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির গ্যারান্টি — যারা আশ্রয় পরিবর্তন করছে, তাঁদের জন্য নিরাপদ পথ ও আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ — মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো থেকে চাপ দিয়ে যুদ্ধবিরতির দাবী ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
সংবাদপত্র ও তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা — সত্য ঘটনাগুলো যাতে প্রকাশ পায়, বিদেশ থেকে নজর রাখা হয়, যাতে জনসমর্থন ও বিশ্বমঞ্চে আলোচনা এগিয়ে যায়।
গাজার মানুষ এখন কেবল একটাই প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছেন—যেন একদিন এই অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটে এবং তারা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
এ ধরনের আরো খবর
এক মাসের ব্যবধানে নিশ্চিহ্ন গাজা সিটি : স্যাটেলাইটে ধরা পড়ল ধ্বংসযজ্ঞ
গাজায় ত্রাণ শিবিরে পাহারায় ইসলাম-বিদ্বেষী মার্কিন বাইকার গ্যাং
জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে প্রস্তাব, হামাসকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান