গাজা উপত্যকায় অবস্থিত নাসের হাসপাতাল আবারও ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রথমে টার্গেট করা হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে জমায়েত হওয়া সাধারণ মানুষকে। আর যখন হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসছিল সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা, তখন দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এই ধরনের আক্রমণকে বলা হয় “ডাবল-ট্যাপ স্ট্রাইক”—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথম বিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই হাসপাতালের সামনে লাশ ও আহতদের স্তূপ পড়ে যায়। আহতদের দ্রুত সরিয়ে নিতে এগিয়ে যান সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীরা। কিন্তু কয়েক মিনিটের মাথায় দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণ ঘটে, যা আরও বড় হত্যাযজ্ঞে পরিণত হয়।
নিহত: অন্তত ২০ জন
এর মধ্যে সাংবাদিক: ৫ জন
আহত: ৪০ জনেরও বেশি
এই ঘটনায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন,
“হাসপাতাল কখনোই যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে না। ডাবল-ট্যাপ হামলা পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করার সামিল।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ইতিমধ্যেই এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধের সম্ভাব্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তদন্ত দাবি করেছে।
এই ধরনের হামলায় প্রথম আক্রমণের পর দ্বিতীয় আক্রমণ করা হয় বিশেষভাবে উদ্ধারকর্মী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে। ইতিহাসে দেখা গেছে—সিরিয়া, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানেও এরকম কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ঘটনাটিকে “অমানবিক” বলে উল্লেখ করেছে।
তুরস্ক ও কাতার: আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র: সতর্ক অবস্থান নিয়ে বলেছে—“বেসামরিক মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না, তবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।”
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের শুরু থেকেই হাসপাতালগুলো ভয়াবহ সংকটে।
ওষুধ, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে।
অনেক হাসপাতাল বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরে চলছে, যা অল্প কিছু ঘণ্টার বেশি চালানো সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।
গত কয়েক মাস ধরে গাজায় হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র বারবার টার্গেট হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি “পদ্ধতিগত যুদ্ধ কৌশল”—যেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো ও গণমাধ্যমকে নীরব করার চেষ্টা চলছে।
সাংবাদিক সংগঠনগুলো এটিকে “গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” বলে অভিহিত করেছে।
গাজার নাসের হাসপাতালে এই হামলা শুধু একটি মর্মান্তিক ঘটনা নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। জাতিসংঘের নিন্দা ও তদন্তের দাবি বিশ্বকে আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে—যুদ্ধের নামে কি এভাবে হাসপাতাল, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে হত্যা বৈধ হয়ে উঠতে পারে?