শিরোনামঃ
গাজায় বোমা বর্ষন বাড়িয়েছে ইসরায়েল, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ফিলিস্তিনিরা সাবেক সার্জেন্ট মেজরের স্বীকারোক্তি: তার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে এক নারী সেনা আত্মহত্যা করেছিলেন চার্লি কার্কের স্ত্রীর আবেগঘন বার্তা: ‘আমি তোমার আদর্শকে কখনো মরতে দেব না’ আবু ধাবির নতুন ওয়েভ পুলে বিলাসিতার দৌড় : প্রত্যেক ঢেউতে $১৫০ পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা: আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল এক নজরে “লালনকন্যা” ফরিদা পারভীনের বর্ণাঢ্য জীবন ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি অবসানের অঙ্গীকার নবনির্বাচিত জাকসু ভিপির সিনেমা দেখে প্রভাবিত হয়ে বাবাকে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

গাজার নাসের হাসপাতালে ‘ডাবল-ট্যাপ’ হামলা: জাতিসংঘের ক্ষোভ, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

রেজওয়ান করিম / ১৮ বার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

গাজা উপত্যকায় অবস্থিত নাসের হাসপাতাল আবারও ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রথমে টার্গেট করা হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে জমায়েত হওয়া সাধারণ মানুষকে। আর যখন হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসছিল সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা, তখন দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এই ধরনের আক্রমণকে বলা হয় “ডাবল-ট্যাপ স্ট্রাইক”—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

কী ঘটেছিল সেই রাতে?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রথম বিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই হাসপাতালের সামনে লাশ ও আহতদের স্তূপ পড়ে যায়। আহতদের দ্রুত সরিয়ে নিতে এগিয়ে যান সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীরা। কিন্তু কয়েক মিনিটের মাথায় দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণ ঘটে, যা আরও বড় হত্যাযজ্ঞে পরিণত হয়।

  • নিহত: অন্তত ২০ জন

  • এর মধ্যে সাংবাদিক: ৫ জন

  • আহত: ৪০ জনেরও বেশি

এই ঘটনায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

জাতিসংঘের ক্ষোভ

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন,

“হাসপাতাল কখনোই যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে না। ডাবল-ট্যাপ হামলা পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করার সামিল।”

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ইতিমধ্যেই এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধের সম্ভাব্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তদন্ত দাবি করেছে।

ডাবল-ট্যাপ হামলা কেন ভয়াবহ?

এই ধরনের হামলায় প্রথম আক্রমণের পর দ্বিতীয় আক্রমণ করা হয় বিশেষভাবে উদ্ধারকর্মী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে। ইতিহাসে দেখা গেছে—সিরিয়া, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানেও এরকম কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ঘটনাটিকে “অমানবিক” বলে উল্লেখ করেছে।

  • তুরস্ক ও কাতার: আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করার আহ্বান জানিয়েছে।

  • যুক্তরাষ্ট্র: সতর্ক অবস্থান নিয়ে বলেছে—“বেসামরিক মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না, তবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।”

মানবিক পরিস্থিতি

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের শুরু থেকেই হাসপাতালগুলো ভয়াবহ সংকটে।

  • ওষুধ, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে।

  • অনেক হাসপাতাল বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরে চলছে, যা অল্প কিছু ঘণ্টার বেশি চালানো সম্ভব নয়।

  • আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।

প্রেক্ষাপট

  • গত কয়েক মাস ধরে গাজায় হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র বারবার টার্গেট হয়েছে।

  • আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি “পদ্ধতিগত যুদ্ধ কৌশল”—যেখানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো ও গণমাধ্যমকে নীরব করার চেষ্টা চলছে।

  • সাংবাদিক সংগঠনগুলো এটিকে “গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” বলে অভিহিত করেছে।

গাজার নাসের হাসপাতালে এই হামলা শুধু একটি মর্মান্তিক ঘটনা নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। জাতিসংঘের নিন্দা ও তদন্তের দাবি বিশ্বকে আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে—যুদ্ধের নামে কি এভাবে হাসপাতাল, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে হত্যা বৈধ হয়ে উঠতে পারে?


এ জাতীয় আরো খবর...