শিরোনামঃ
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি অবসানের অঙ্গীকার নবনির্বাচিত জাকসু ভিপির সিনেমা দেখে প্রভাবিত হয়ে বাবাকে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার ভিপি নুরের ওপর হামলা: সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাশেদ খান গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বিএনপির লক্ষ্য: সালাহউদ্দিন আহমদ সাম্প্রদায়িক উত্থানের কারণে মবের ঘটনা বাড়ছে: গয়েশ্বর চন্দ্র অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে: জি এম কাদের জাকসুর ভিপি জিতু, জিএস মাজহারুল, এজিএস ফেরদৌস ও মেঘলা ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন

চন্দ্রগ্রহণে কি মানবো কি মানবো না

রেজওয়ান করিম / ৪২ বার
প্রকাশ: শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আজ, (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) চাঁদ তার মহাজাগতিক যাত্রায় এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছে – পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। যখন পৃথিবী তার বিশাল ছায়া দিয়ে চাঁদকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে, তখন এটি কেবল একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, বরং শতাব্দী ধরে চলে আসা বিভিন্ন বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক প্রতিচ্ছবি। একদিকে যেমন বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলা এক অসাধারণ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেন, অন্যদিকে অনেক সমাজে এটি গভীর আধ্যাত্মিক এবং কুসংস্কারের সঙ্গে জড়িত।

চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে অনেক ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত আছে, যা কুসংস্কার ও বাস্তবতার মধ্যে বিভক্ত। বিজ্ঞান কখনোই এই ধরনের বিশ্বাস বা কুসংস্কারকে সমর্থন করে না। চন্দ্রগ্রহণ একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ঘটনা। যখন পৃথিবী সূর্য এবং চাঁদের মাঝে চলে আসে এবং চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে, তখন চন্দ্রগ্রহণ হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।

এখানে চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কিত কিছু প্রচলিত বিশ্বাস ও সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

 

যে বিষয়গুলো মানা হয় (প্রচলিত বিশ্বাস):

  • খাবার খাওয়া নিষেধ: অনেক জায়গায় বিশ্বাস করা হয় যে গ্রহণের সময় খাবার খেলে তা বিষাক্ত হয়ে যায়।
  • রান্না করা নিষেধ: এই সময়ে রান্না করা বা খাবার প্রস্তুত করা অশুভ বলে মনে করা হয়।
  • গর্ভাবস্থায় বাইরে যাওয়া নিষেধ: গর্ভবতী নারীদের গ্রহণের সময় বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়। মনে করা হয় এতে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
  • ধর্মীয় কাজ বা প্রার্থনা: কিছু বিশ্বাস অনুযায়ী, গ্রহণের সময় ধ্যান বা প্রার্থনা করলে তা বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হয়।
  • ধারালো বস্তু ব্যবহার নিষেধ: গ্রহণ চলাকালীন ছুরি বা অন্য ধারালো জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়।

 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবতা:

  • খাবার ও পানীয়: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রহণ চলাকালীন খাবার বা পানীয়ের গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন আসে না। খাদ্য বিষাক্ত হওয়ার ধারণাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
  • রান্না করা: এই সময়ে রান্না করা বা খাবার প্রস্তুত করায় কোনো সমস্যা নেই। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
  • গর্ভাবস্থা: গ্রহণের সময় বাইরে বের হওয়া বা ঘরে থাকা গর্ভবতী নারী বা তার শিশুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এর ফলে কোনো শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
  • ধারালো জিনিস: গ্রহণ চলাকালীন ধারালো জিনিস ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। এর সঙ্গে কোনো দুর্ঘটনার সম্পর্ক নেই।

সংক্ষেপে, চন্দ্রগ্রহণ একটি মহাজাগতিক ঘটনা। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ মানার প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে এই বিষয়গুলো মানতেও পারেন, আবার না-ও মানতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাস:

প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতা চন্দ্রগ্রহণকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এসেছে। অনেক সংস্কৃতিতে এটিকে একটি খারাপ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিছু সমাজে মনে করা হতো যে একটি রাক্ষস বা ড্রাগন চাঁদকে গিলে খাচ্ছে। এই বিশ্বাস থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, প্রার্থনা এবং জোরে শব্দ করে রাক্ষসটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করত।

  • প্রাচীন গ্রিকরা: তারা বিশ্বাস করত চন্দ্রগ্রহণ দেবতাদের অসন্তুষ্টির লক্ষণ।
  • মেসোপটেমিয়ানরা: তারা চন্দ্রগ্রহণকে রাজার জন্য বিপদ সংকেত হিসেবে দেখত। তাই তারা এই সময়ে রাজাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে থাকতে বলত।
  • ভারতীয় সংস্কৃতিতে: চন্দ্রগ্রহণকে সাধারণত অশুভ হিসেবে দেখা হয়। এই সময়ে খাবার গ্রহণ, রান্না করা, বা ধারালো বস্তু ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভবতী নারীদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে, এই বিশ্বাস থেকে যে এটি গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে।

বিজ্ঞানের চোখে চন্দ্রগ্রহণ:

বিজ্ঞানীরা চন্দ্রগ্রহণকে একটি সাধারণ মহাজাগতিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এটি ঘটে যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একটি সরল রেখায় চলে আসে এবং পৃথিবী সূর্যের আলো চাঁদের উপর পড়তে বাধা দেয়। এর ফলে চাঁদ সাময়িকভাবে অন্ধকার হয়ে যায়। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে গেলেও এটি সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায় না, বরং একটি লালচে বা তামাটে রঙ ধারণ করে। এর কারণ হলো, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে সূর্যের কিছু নীল আলো ছড়িয়ে যায় এবং লাল আলো চাঁদের উপর পৌঁছায়, যা চাঁদকে ‘রক্ত চন্দ্র’ (Blood Moon) হিসেবে পরিচিত করে তোলে। এই ঘটনাটি কোনো অস্বাভাবিক বা অশুভ লক্ষণ নয়, বরং এটি আলোর প্রতিসরণের একটি প্রাকৃতিক উদাহরণ।

আধুনিক যুগে চন্দ্রগ্রহণ:

আধুনিক যুগে চন্দ্রগ্রহণ একটি পর্যটন আকর্ষণ এবং শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সময়ে চাঁদকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান এবং সাধারণ মানুষও খালি চোখে এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। বর্তমানে, মোবাইল অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে মানুষ সহজেই গ্রহণের সময় এবং স্থান সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে।

উপসংহার:

চন্দ্রগ্রহণ একদিকে যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি মনোমুগ্ধকর উদাহরণ, অন্যদিকে এটি মানব সভ্যতার বহু প্রাচীন বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের প্রতিফলন। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এটি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা, যার সঙ্গে মানুষের জীবনের ভালো-মন্দ বা ভাগ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও, এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি আমাদের প্রাচীন ইতিহাস এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মধ্যে এক দারুণ সেতুবন্ধন তৈরি করে।


এ জাতীয় আরো খবর...