কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর জগতে চলতি সপ্তাহটি এককথায় অবিশ্বাস্য। গুগল, মাইক্রোসফট, ওপেনএআই এবং এনভিডিয়ার মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা একের পর এক এমন সব যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে, যা প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আমূল বদলে দিতে চলেছে। ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে জটিল রোবোটিক্স—সর্বত্রই এই নতুন প্রযুক্তির প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।
গুগলের জোড়া উদ্ভাবন: এই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে গুগল। তারা তাদের আলোচিত ইমেজ এডিটর ‘ন্যানো- बनाना’-কে ‘Gemini 2.5 Flash Image’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেছে। এর বিশেষত্ব হলো Consistent Identity, যার মাধ্যমে ছবিতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পরিচয় ঠিক রেখে বিভিন্নভাবে এডিট করা যাবে। একই সাথে, তাদের নোটবুক অ্যাপ NotebookLM-এ যোগ করা হয়েছে ভিডিও ও অডিও সারাংশ (Overviews) তৈরির সুবিধা, যা ৮০টিরও বেশি ভাষায় কাজ করবে। এটি গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সহায়ক হবে।
মাইক্রোসফট ও অ্যানথ্রোপিকের চমক: পিছিয়ে নেই মাইক্রোসফটও। তারা ঘোষণা করেছে যে, স্যামসাং-এর ২০২৫ সালের স্মার্ট টিভি মডেলে তাদের জনপ্রিয় Copilot AI যুক্ত থাকবে, যা ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও ইন্টারঅ্যাকটিভ করবে। একই সাথে, তারা ‘VibeVoice’ নামে একটি শক্তিশালী ওপেন-সোর্স টেক্সট-টু-স্পিচ (TTS) মডেল এনেছে, যা দীর্ঘ মাল্টি-স্পিকার কথোপকথন পরিচালনা করতে সক্ষম।
অন্যদিকে, Anthropic তাদের Claude AI-কে Chrome ব্রাউজার এক্সটেনশন হিসেবে উন্মুক্ত করেছে, যা ব্যবহারকারীদের কাজের সময় ব্রাউজারেই টেক্সট লেখা বা সারাংশ তৈরিতে সাহায্য করে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।
ডেভেলপার ও রোবোটিক্সের জন্য নতুন দিগন্ত: ডেভেলপারদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে OpenAI। তাদের বিখ্যাত Codex মডেলটিকে এখন সরাসরি VS Code-এর মতো জনপ্রিয় IDE-তে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা কোডিং প্রক্রিয়াকে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত ও সহজ করে তুলবে।
হার্ডওয়্যারের জগতে সবচেয়ে বড় ঘোষণা এসেছে চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার কাছ থেকে। তারা রোবোটিক্সের জন্য বিশেষভাবে তৈরি শক্তিশালী AI চিপ ‘Jetson AGX Thor’ উন্মোচন করেছে, যা AI চালিত রোবটকে আরও শক্তিশালী করবে।
সবশেষে, ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান xAI তাদের ইমেজ জেনারেটর ‘Grok Imagine’-কে ওয়েব অ্যাপ হিসেবে উন্মুক্ত করেছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য AI ইমেজ তৈরিকে আরও সহজলভ্য করবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণাগুলো AI খাতে তীব্র প্রতিযোগিতারই প্রতিফলন। প্রতিটি কোম্পানিই ব্যবহারকারীদের নিজেদের ইকোসিস্টেমে ধরে রাখতে চাইছে এবং দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা পর্যন্ত সর্বত্র AI-কে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।