শিরোনামঃ
সেই প্রাইভেট কারের ধাক্কায় আহত চার নারীর একজনের মৃত্যু গাজায় বোমা বর্ষন বাড়িয়েছে ইসরায়েল, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ফিলিস্তিনিরা সাবেক সার্জেন্ট মেজরের স্বীকারোক্তি: তার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে এক নারী সেনা আত্মহত্যা করেছিলেন চার্লি কার্কের স্ত্রীর আবেগঘন বার্তা: ‘আমি তোমার আদর্শকে কখনো মরতে দেব না’ আবু ধাবির নতুন ওয়েভ পুলে বিলাসিতার দৌড় : প্রত্যেক ঢেউতে $১৫০ পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা: আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল এক নজরে “লালনকন্যা” ফরিদা পারভীনের বর্ণাঢ্য জীবন ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি অবসানের অঙ্গীকার নবনির্বাচিত জাকসু ভিপির
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

ঝিনাইদহে বিদেশি ফল চাষে নয়া সম্ভাবনা, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪৪ বার
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

ঝিনাইদহ, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস):দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর জনপদ ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হচ্ছে রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও আঙুরের মতো ভিনদেশী ফল।

এসব ফল স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের অন্যান্য শহরে।

অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান কিংবা আঙুর চাষের কথা ভাবলেই বিদেশি আবাদের কথা মনে ভেসে ওঠে। দেশের বাজারের চাহিদা পূরণে মূল্যবান এসব ফল সারাবছর আমদানি করা হয়। কিন্তু অবাক করা তথ্য, পলিমাটির বাংলাদেশেও এখন চাষ হচ্ছে বাহারি সব বিদেশি ফল।

জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর,  হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় এবছর আঙুরের চাষ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। শখের বশে আঙুর চাষ করলেও ভালো ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিক আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। পতিত জমিতেও আঙুর, অ্যাভোকাডোর বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষীরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলক এসব বিদেশি ফলের আবাদ করেন তারা। তবে বছর ঘুরতেই দারুণ ফলন পাওয়ায় বিদেশি এসব ফল চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

কালীগঞ্জ উপজেলার চাচড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান তিন বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো। চারা রোপনের প্রায় ৫ বছর পর পেয়েছেন দারুণ ফলন। তার লাগানো গাছে গাছে এখন ঝুলছে অ্যাভোকাডো।

কৃষক শাহিনুর রহমান বাসস কে বলেন, ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে একজন কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে অ্যাভোকাডোর চারা নিয়ে আসি। এরপর সেটি বাগানে রোপন করি।

প্রথম দিকে মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। কিন্তু পাঁচ বছর পর আমার গাছে প্রথম ফল আসে। প্রথম বছর ফলের উৎপাদন কম ছিল।

এবছর দারুণ ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর অ্যাভোকাডো ধরেছে।

তিনি জানান, স্থানীয় বাজারে অ্যাভোকাডোর চাহিদা বেশি না থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ বড় বড় শহরের রেস্তোরাগুলোতে অ্যাভোকাডোর চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয় অ্যাভোকাডো। তবে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে ঝিনাইদহের অ্যাভোকাডো কেজি প্রতি গড়ে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।

কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলশিক্ষক হাফিজুর রহমান লাগিয়েছেন লংগান। পেয়েছেন দারুণ সাফল্য। এবছর তিনি লংগান বিক্রি করে বেশ আয় করেছেন।

হাফিজুর রহমান বাসস কে বলেন, লংগান বিদেশী ফল। এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। পরিচর্যা করলেই হয়। রাসায়নিক কিংবা কীটনাশকের ব্যবহার বেশি করা লাগে না। আগামীতে রাম্বুটান সহ অন্যান্য কয়েকটি বিদেশি ফল চাষের পরিকল্পনা নিয়েছি।

এদিকে জেলার মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় বেড়েছে আঙুর চাষ। সবুজ আঙুরের পাশপাশি এসব উপজেলায় রঙিন আঙুরের চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলার বেতাই গ্রামের আঙুর চাষী আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে আঙুর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আগামী বছর তিনি আঙুরের আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন।

মহেশপুর উপজেলার আব্দুর রশিদ বলেন, আমি এবছর তিন বিঘা জমিতে আঙুর চাষ করেছিলাম। বিদেশি আঙুরের অন্তত ১২ টি জাতের চারা রোপন করে বাগান গড়েছি।

জাতের ভিন্নতা থাকায় আমার বাগানে খয়েরি, লাল ও সবুজ আঙুরের ভালো ফলন পেয়েছি। আঙুরের দামও ভালো পাওয়া গেছে। আঙুর চাষের পাশাপাশি মানসম্মত চারা উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুমে জেলায় ১ হেক্টর জমিতে রাম্বুটান আবাদ হয়েছে। কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় এই ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন কৃষকরা।

এছাড়া জেলায় ২ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জে ১ দশমিক ৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদুপরে ১ হেক্টর ও  হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় শুণ্য দশমিক ২৪ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো আবাদ করেছেন কৃষকরা।

জেলার সদর উপজেলা,  হরিণাকুণ্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদুপর ও মহেশপুর উপজেলায় ২ দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে আঙুরের পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ০.৪৪ হেক্টর, কালীগঞ্জে ০.৫৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ০.৩১ হেক্টর, মহেশপুরে ০.৬৬ হেক্টর ও  হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ০.২৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বিদেশি আঙুরের আবাদ করেছেন চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বাসস কে বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলার মাটির একটি বিশেষ গুণ আছে। এই মাটিতে নানান রকম বিদেশি ফলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষকেরা চাষাবাদ শুরু করলেও সফলতা আসার পরে তা বাণিজ্যিক আবাদে রূপান্তরিত হচ্ছে। এটা আমাদের কৃষিতে এক দারুণ বিপ্লব বলা যায়।

বিদেশি ফলের আবাদ বাড়লে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। বাঁচবে কৃষক, সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।


এ জাতীয় আরো খবর...