নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ঢোকার সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ এবং হেনস্তার চেষ্টা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। স্থানীয় সময় রোববার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে রোববার কনস্যুলেট অফিসে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাহফুজ আলম।
উপদেষ্টা কনস্যুলেটে প্রবেশের সময় আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে দলটির কর্মী ও সমর্থকেরা ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা মাহফুজ আলমকে উদ্দেশ করে ডিম ছোড়েন এবং তার বিরুদ্ধেও নানা স্লোগান দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে এ চিত্র দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কনস্যুলেটের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল দিচ্ছেন অনেক নেতাকর্মী। কনস্যুলেটের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন কয়েকজন।
মাহফুজ আলম প্রবাসীদের জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘জুলাই সনদে প্রবাসীদের অবদান উল্লেখ থাকবে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের অংশীজন নই। আমরা চাই ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা জুলাই চেতনাকে ধারণ করে দেশ পরিচালনা করবেন। দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক হবে রাষ্ট্র। নিজের রাজনৈতিক চেতনার চেয়েও দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে। সবার ঊর্ধ্বে দেশকে এবং দেশের জনগণকে যেন আমরা রাখি।’
বাংলাদেশে ভারতীয় টেলিভিশন বা গণমাধ্যম বন্ধ করার আহ্বান প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমি কোনো কিছু বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নই। আমি সব সময় বিকল্প ভালোর কথা বলে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের কোনো কিছুও বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নই।’
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, অনুষ্ঠান চলাকালে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কখন বের হবেন, সেজন্য বাইরে বিক্ষুব্ধ আওয়ামী নেতা-কর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন। তাদের অবস্থান বুঝে কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবহিত করে। স্থানীয় সময় রাত ১২টার পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পাহারায় মাহফুজ আলম কনস্যুলেট অফিস থেকে বের হন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সোমবার (২৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের সহকর্মীরা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থিত সকল বাংলাদেশি মিশন ও দূতাবাস কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম বৃহৎ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে, বাংলাদেশের পতিত স্বৈরশাসকের সমর্থকদের এমন ন্যক্কারজনক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী স্বাগতিক দেশকে ওই দেশে অবস্থিত সকল মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। তাই নিউইয়র্কের ওই দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র সরকারের।
দীর্ঘদিন হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্টে সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এ বিষয়ে আমার সহকর্মীদের (বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা) প্রয়োজনীয় যে কোনো সহযোগিতা প্রদানে আমি প্রস্তুত।