নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস বিক্ষোভের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশজুড়ে কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি প্রতিদিনই সহিংসতার খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেক নাগরিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন।
রাজধানী কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত টিকিট সংগ্রহ ও বিমানে ওঠার জন্য হাজারো মানুষ অপেক্ষা করছেন। বিশেষ করে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা দেশগুলোতে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। যাদের হাতে বৈধ ভিসা ও টিকিট রয়েছে তারা তড়িঘড়ি দেশ ছাড়ছেন, অন্যদিকে অনেকে নতুন ভিসার জন্য আবেদন করছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা ও পুলিশ বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে দীর্ঘ সারি, ফ্লাইট বিলম্ব এবং অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। দেশটির তরুণ সমাজ ও কর্মজীবী শ্রেণির অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সংকট দীর্ঘায়িত হলে জীবিকা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জনগণের এই উদ্বেগ নেপালের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার গভীরতা এবং আস্থার সংকটকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
এদিকে, সরকার কে পরিচালনা করবে তা নিয়ে দেশজুড়ে বিভ্রান্তি চলছে। প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ ওলি পদত্যাগ করার পর প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল তাকেই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার অনুরোধ জানান, কিন্তু ওলি তার সরকারি বাসভবন থেকে পালিয়ে যান। এতে রাজধানীর বাসিন্দারা কে ক্ষমতায় আছে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সরকারের ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের কারণে। তবে বিক্ষোভ শুধু এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এতে পুলিশের গুলিতে ৩০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়ে। এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবন এবং তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান না থাকাও এই বিক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নেপালে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ২০% এবং প্রতিদিন ২০০০-এর বেশি তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমায়।
বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকি নেপালের বৃহত্তম গণমাধ্যম কান্টিপুর পাবলিকেশনের ভবনেও হামলা করা হয়। সহিংসতায় মোট ৩০ জন নিহত এবং ১,০৩৩ জন আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সেনাবাহিনী সচরাচর নেপালে এভাবে মোতায়েন হয় না। পুলিশের পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নামে। বুধবার তারা কাঠমান্ডুর একটি প্রধান কারাগারে বন্দিদের পালানোর চেষ্টা প্রতিহত করে।
আরো পড়ুন: