শিরোনামঃ
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি অবসানের অঙ্গীকার নবনির্বাচিত জাকসু ভিপির সিনেমা দেখে প্রভাবিত হয়ে বাবাকে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার ভিপি নুরের ওপর হামলা: সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাশেদ খান গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বিএনপির লক্ষ্য: সালাহউদ্দিন আহমদ সাম্প্রদায়িক উত্থানের কারণে মবের ঘটনা বাড়ছে: গয়েশ্বর চন্দ্র অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে: জি এম কাদের জাকসুর ভিপি জিতু, জিএস মাজহারুল, এজিএস ফেরদৌস ও মেঘলা ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৭ বার
প্রকাশ: শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন। আরবের মক্কা নগরের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রিষ্ঠাব্দের এই দিনে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। নবীজীর বাবা আবদুল্লাহ ও মা আমিনা। জন্মের আগেই রাসুল (সা.) তার বাবাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। ৬৩২ খ্রষ্টিাব্দের একইদিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বা সিরাতুন্নবী (সা.) হিসাবে পালন করেন।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দান-খয়রাতসহ নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করবেন। অনেকে এই দিনে নফল রোজা রাখেন।

জন্ম ও শৈশব

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কার কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। জন্মের আগেই তিনি পিতাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে হারান তার মাতাকেও। এরপর দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং পরবর্তীতে চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে তিনি বড় হন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে সততা, বিশ্বস্ততা ও উত্তম চরিত্রের গুণাবলি প্রকাশ পায়। তার সততার জন্য আরবের লোকেরা তাকে ‘আল-আমিন’ বা ‘বিশ্বস্ত’ উপাধি দিয়েছিল।

নবুয়ত লাভ ও ইসলামের প্রচার

৪০ বছর বয়সে মক্কার হেরা গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে ওহী আসে। জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাকে নবুয়ত প্রদান করেন এবং ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দেন। তিনি প্রথমে গোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন এবং পরে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিতে থাকেন। মক্কার তৎকালীন নেতারা তার প্রচারিত সত্যের বিরোধিতা করে। নানা রকম অত্যাচার ও নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে তার মিশন চালিয়ে যান।

হিজরত ও মদিনা জীবন

মক্কায় যখন অত্যাচার চরম আকার ধারণ করে, তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি অনুসারীদের নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। এই হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মদিনায় তিনি একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করেন। সেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। মদিনার সনদ ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করেছিল।

বিজয় ও বিদায় হজ

দীর্ঘ সংগ্রামের পর ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে বিনা রক্তপাতে তিনি মক্কা বিজয় করেন। মক্কায় প্রবেশ করে তিনি ক্ষমা ও উদারতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যারা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল, তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি জীবনের শেষ হজ পালন করেন এবং আরাফাতের ময়দানে তার ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দিয়ে যান, যা মানবাধিকারের ইতিহাসে এক মাইলফলক।

মহানবী (সা.)-এর আদর্শ

মহানবী (সা.) শুধু একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, সমাজ সংস্কারক, ন্যায়বিচারক ও শিক্ষাবিদ। তিনি সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি গোত্রীয় ভেদাভেদ দূর করে মানব জাতিকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছিলেন। নারী জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা, দাসপ্রথার বিলোপ এবং জ্ঞান অর্জনের ওপর তার তাগিদ ছিল অপরিসীম।

 

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদষ্টো ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন। সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে দিনটি উদযাপিত হবে। বাংলাদেশে আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় ছুটি।

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ অঙ্কিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ ও লাইট পোস্টে টানানো হয়েছে।

 

পক্ষকালব্যাপী নানা কর্মসূচি

দিনটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশবরেণ্য আলেম-ওলামা বয়ান করবেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে দেশবরেণ্য আলেম-ওলামা, ইসলামি স্কলার, লেখক, কবি ও গবেষকদের লেখাসমৃদ্ধ একটি আকর্ষণীয় সিরাত স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় মসজিদের পূর্ব ও দক্ষিণ সাহানে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

এতে মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও লেবাননের পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেবে। এবারের মেলা বৃহত্তর পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রায় ২০০টি স্টল স্থান পাচ্ছে। মেলা শুরু হবে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।

ঢাকা মহানগরীর স্কুল, কলেজ, আলিয়া ও কওমি মাদরাসা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁও কার্যালয়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

১৮ সেপ্টেম্বর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ১১ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব কিরাত মাহফিল, ১৭ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব হামদ-নাত ও ১৮ সেপ্টেম্বর বাদ আসর রাসুল (সা.)-এর শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর আয়োজন করা হবে। এতে দেশের প্রখ্যাত কারি, কবি ও শিল্পীরা অংশ নেবেন।

এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৬টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কর্ম সম্পর্কিত ওয়াজ মাহফিল এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।

ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা

এদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) শানি্তপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শনিবার দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর মতো প্রধান শহরগুলোতে সুষ্ঠু ও নিরাপদে জমায়েত ও শোভাযাত্রা নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদষ্টো লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চেৌধুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষত বৃহৎ মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানে, যেখানে বড় সমাবেশের সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।

ইতোমধ্যে সংবেদনশীল স্থানগুলোতে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকর জনসমাগম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

মানবতার দিশারি: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ


এ জাতীয় আরো খবর...