– রিন্টু আনোয়ার
গুলি হয়েছে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন প্রার্থী। মৃত্যু হয়েছে একজনের। এর জন্য নিন্দা ও উদ্বেগ জানাতে হয়েছে সরকারকে। বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছে, সরকার তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, হামলাকারীদের শনাক্ত ও আটক করতে যেন কোনো ধরনের শিথিলতা না থাকে এবং দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। এও বলা হয়েছে যে, সরকার নিজ দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে সারাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা করতে তো সরকারকে কেউ না করেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী আগেই ২৯৮টি সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জানিয়েছেন। তারপরও আরেকবার তারা তা জানান দেবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি শিগগিরই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। বিএনপির ঘোষণাটির ভ্যালু আলাদা। চট্টগ্রামের ঘটনা এবং ঘটনা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিরও একটি বাড়তি বার্তা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে কোন বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে দেশের প্রধান দল বিএনপিকে? কোনদিকে যাচ্ছে দলটি সরকারই বা কী করবে-এসবের একটা রিহার্সাল কিন্তু হয়ে যাচ্ছে। বিএনপিই সব নয় সত্য। কিন্তু অনেক কিছু। দেশের এ বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে সারা দেশে নির্বাচনি প্রকৃত আবহ তৈরি হয়েছে। আনন্দ-উচ্ছ্বাস, মিষ্টি বিতরণ, মিলাদ, দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। আবার মনোনয়ন না পাওয়াদের প্রতিবাদ, বিকল্প প্রার্থীর দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে নানা মিছিলসহ কতো যে ক্যারিকেচার।
নির্বাচনে ভোট গণনায় জয়-পরাজয়ের আগেও একটি জয়-পরাজয় পর্ব থাকে। তা হচ্ছে মনোনয়ন পাওয়া, না পাওয়া। মনোনয়ন পাওয়া মানেই জয়ের অনুভূতি বোধ করার রেকর্ড যেমন আছে। আর মনোনয়ন না পাওয়া মানেই ইহজিন্দেগীর পরাজয় মনে করার রেওয়াজও আছে। তা নির্বাচনের ইতিহাস লগ্ন থেকেই চলছে। এবারের ব্যাপারটা আরেকটু ভিন্ন। দেশের সর্ববৃহত দল বিএনপি একটু আগেভাগেই ২৩৮টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে। যথারীতি এতে কেউ খুশি, কেউ বেজার। পেয়ে বেশির ভাগ জায়গায় প্রার্থীর পক্ষে উৎসব। নানা কৌশলী প্রচারণা। আর মনোনয়ন না পাওয়ায় বিভিন্ন আসনে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। মান-অভিমানের দৃশ্যায়ন। রাস্তা বন্ধ করে হিম্মত-জান দেওয়া ঘোষণা! প্রার্থী না বদলালে বহু কাণ্ড ঘটিয়ে দেয়ার কড়া বার্তা। বেশ উপভোগ্য নাটকীয়তাও কোথাও কোথাও। মনোনয়ন স্থগিতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের চেয়েও বড় নির্বাচনের ঘটনাও ঘটে গেছে বিএনপিতে। বেশ ইন্টারেস্টিং বিষয়টি। দল থেকে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হয়েছে একদ প্রার্থী বদলের কথা। দলের সিনিয়র যুগ্ম রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণার উদৃতি দিয়ে বলা হয়, ঘোষিত ২৩৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে অনিবার্য কারণবশত মাদারীপুর-০১ (শিবচর উপজেলা) আসন ও দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম স্থগিত রাখা হলো। তার নাম কামাল জামান মোল্লা। তার নাম ঘোষণার প্রতিবাদে মাদারীপুরের শিবচরের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলুর কর্মী-সমর্থকরা। তারা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়েও দেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমমাধ্যমেও কামাল জামান মোল্লাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে থাকা তার ছবি শেয়ার হতে থাকে নতুন করে। এর জেরে কাটা পড়ে তার নাম। প্রার্থীতা বদলসহ সামনে আরো ঘটনার আভাস রয়েছে। যার এক ঝলক ঘটলো আওয়ামী লীগ আমলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়াপুত্র রেজা কিবরিয়ার মাধ্যমে। তিনি হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে ধানের শীষে নির্বাচন করতে পারেন। আসনটি ফাঁকাই রেখেছে বিএনপি। গণমাধ্যমকে রেজা কিবরিয়া জানান, ইতোমধ্যে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। প্রাথমিক সদস্য ফরমও পূরণ করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি হবিগঞ্জ-১ থেকে ধানের শীষে নির্বাচন করেছিলেন তা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না করা আসনগুলো ঘিরে রয়েছে জোট বা সমঝোতার বিষয়। যোগদানের বিষয়ও থাকতে পারে। তখন রেজা কবরিয়া ধরনের বা কাছাকাছি কিছু ঘটনার আভাস রয়েছে। খালি রাখা ৬৩টি আসনের মধ্যে জোট শরিকদের জন্য ৪০টি আসন ছেড়ে দেওয়া নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। এনসিপির সঙ্গে জোট বা বোঝাপড়া হলে হিসাব-নিকাশে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। এনসিপি এরইমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্মান দিয়েছে তার আসনে কোনো প্রার্থী দেবে না বলে ঘোষণা দিয়ে। জোট শরিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে বিএনপি থেকে ৪০টি আসনের কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনী জোট হলেও নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করতে হবে। তাই জোটের শরিক দলগুলোকে আসন ছাড় দিলেও তাঁরা নির্বাচিত হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এখনো প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া ৬৪টি আসন ঘিরেই সবার দৃষ্টি। ঘোষিত ২৩৭ আসনেও এদিক-সেদিক হতে পারে। ঘোষণার দিনই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এটি চূড়ান্ত নয়। বিএনপি এবার এক পরিবার থেকে দুজনকে মনোনয়ন না দেয়ার ঘোষণা বাস্তবায়ন করেছে বেশ সাফল্যের সঙ্গে। তবে প্রয়াত এবং সাবেক-বর্তমান নেতাদের সন্তানদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মনোনয়ন তালিকায় নাম রয়েছে দলটির প্রয়াত, সাবেক ও বর্তমান নেতাদের ২৪ জন ছেলে ও মেয়ের। এর মধ্যে ১৯ জন ছেলে, ৫ জন মেয়ে। প্রয়াত দুই নেতার স্ত্রীরাও পেয়েছেন মনোনয়ন। অবশ্য পরিবার অনেকের একমাত্র পরিচয় নয়। এঁদের প্রায় সবাই রাজনীতিতে সক্রিয়। বাবা বা স্বামীর হাত ধরে রাজনীতিতে এসে বিএনপির কাছে সংসদ সদস্যের টিকিট চেয়েছিলেন, এমন সংখ্যা অর্ধশতের বেশি। ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও তাঁর পুত্রবধূ নিপুন রায় চৌধুরী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এই আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। নাটোর-১ : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুল ও ছেলে ইয়াসির আরশাদ। মনোনয়ন পেয়েছেন পুতুল। পুতুলের পক্ষে এলাকায় উৎসব আমেজ। হতাশা –ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছে আরশাদের লোকজন। তারা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তারা। পুতুলের লোকদের মারধরও করেছেন। নমুনা বুঝে আরশাদের পক্ষের কিছু লোকজন এখন সাইড কাটতে শুরু করেছেন। এটাও একটা নির্বাচন। এমন উদাহরণ আরও আছে।
যে ৬৩টি আসনে এখনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি সেখানে ৯টি আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় দলের নেতাদের পুত্র ও কন্যা রয়েছেন। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ঢাকা-৬ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-৭ আসনে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে সিটি দেয়া হয়েছে সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল উদ্দিনকে। ঢাকা-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন এবং চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। গাজীপুর-২ আসনে সাবেক মেয়র প্রয়াত এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনি, গাজীপুর-৪ আসনে সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, মানিকগঞ্জ-২ আসনে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মঈনুল ইসলাম খাঁন, ময়মনসিংহ-৯ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আনওয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে ইয়াসের খাঁন চৌধুরী, শেরপুর-২ আসনে প্রয়াত জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে মোহাম্মদ ফাহিম চৌধুরী, শেরপুর-৩ আসনে সাবেক এমপি সিরাজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হক রুবেলও মনোনয়ন পেয়েছেন। এ তালিকায় আছেন যশোর-৩ এ সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কুষ্টিয়া-২ আসনে এমপি আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে রাগীব রউফ চৌধুরী, ঝিনাইদহ-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, সিলেট-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত খন্দকার আবদুল মালেকের ছেলে খন্দকার আবদুল মোক্তাদির চৌধুরী, পিরোজপুর-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহমেদ সোহেল মঞ্জুরও। পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমির, জয়পুরহাট-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোজাহার আলী প্রধানের ছেলে মাসুদ রানা প্রধান, মৌলভীবাজার-৩ আসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমানের নামও আছে গুরুত্বের সাথে।
বিএনপি ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী ১০ জন। তাদের পাঁচজনের বাবা দলের সাবেক অথবা বর্তমান নেতা। তাঁরা হলেন ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খানম রিতা, শেরপুর-১ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর মেয়ে সানসিলা জেবরিন, নাটোর-১ আসনে প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে পুতুল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালে গুমের শিকার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যশোর-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত নাজমুল ইসলামের স্ত্রী সাবিরা সুলতানাকে। ঝালকাঠি-২ আসনে সাকেব এমপি জুলফিকার আলী ভূট্টোর স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন-নবী খান সোহেল, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন মনোনয়ন পাননি। কোন বিবেচনায় তাঁদের প্রার্থী করা হয়নি, তা জানা যায়নি। তবে তাঁদের প্রার্থী না করায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন আছে।
তারপরও গুমের শিকার পরিবারের সদস্য, ছাত্রদল-যুবদলের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয় হয়েছে বলে, বিএনপি’র নীতিনির্ধারকেরা এ প্রার্থী তালিকাকে ‘ভারসাম্য’ রক্ষার প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন, এখানে পর্যবেক্ষণের অনেক কিছু রয়েছে।
এদিকে দেশ সংকটময় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, দেশ কোন দিকে যাবে, গণতন্ত্রের পথে কীভাবে হাঁটবে, সেটা নির্ভর করছে আগামী সংসদ নির্বাচনের ওপর। নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গতিপথ নির্ধারিত হবে। বিগত সময়ে নির্বাচন কমিশন, আদালত, জনপ্রশাসনসহ সব কিছুই ছিল বেদখল। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন দলীয়করণের ফলে মানুষের ভিতর এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছিল নির্বাচনিব্যবস্থার প্রতি। সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছিল। দেশে কোনো নির্বাচনিব্যবস্থা কার্যকর ছিল না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের ফলে অযোগ্য, অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের দখলে চলে যায়। কাজেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটি পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান গণমানুষের ভোটের অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার বিগত সরকারের আমলে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে সর্বত্র দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন সংঘটিত হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের উচিত এই ব্যবস্থাকে রোধ করে একটি জবাবদিহিমূলক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করা।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন হলেই চলবে না। গণতন্ত্র, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা, ভোটাধিকারসহ সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের সচেতন ব্যক্তিদের ভূমিকা রয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। তাই নির্বাচনে জনগণ যেন তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সেটি আমাদের দেখতে হবে।
আমরা সব সময়ই আশা করি নির্বাচনে যেন সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীরই জয় হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে কখনোই সেটা হয় না।
লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
rintu108@gmail.com