বর্তমান সময়ে সৌদি আরব বিদেশি পেশাজীবী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে একটি অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘সৌদি গ্রিন কার্ড’ নামে পরিচিত এই রেসিডেন্সি প্রোগ্রামটি বিদেশি নাগরিকদের স্থানীয় স্পন্সর বা কফিল ছাড়াই সৌদি আরবে বসবাস, কাজ এবং ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছে। দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ এর অংশ হিসেবে এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক মেধা ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
বিশেষজ্ঞরা এই প্রোগ্রামটির সুবিধাসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সৌদি আরবে বসবাসের জন্য আবেদনকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো:
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাসের সুযোগ।
নিজস্ব ব্যবসা শুরু বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বাধীনতা।
সৌদিতে সম্পত্তি কেনার এবং মালিকানা লাভের সুযোগ (মক্কা, মদিনা ও সীমান্ত এলাকায় এটি প্রযোজ্য নয়)।
নিজ দেশে অবাধে আসা-যাওয়ার সুবিধা এবং স্ত্রী ও সন্তানদের স্পন্সর করার সুযোগ।
এই প্রোগ্রামের অধীনে দুই ধরনের রেসিডেন্সি প্রদান করা হয়:
১. স্থায়ী রেসিডেন্সি: এককালীন ফি ৮ লাখ সৌদি রিয়াল। যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সমান। এই রেসিডেন্সির মেয়াদ আজীবন বৈধ থাকবে।
২. নবায়নযোগ্য রেসিডেন্সি: প্রতি বছর ১ লাখ সৌদি রিয়াল ফি দিতে হবে। বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৩৩ লাখ টাকার সমান। এটি প্রতিবছর নবায়ন করা যাবে।
আবেদনের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ২১ বছরের বেশি হতে হবে, বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে এবং কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না। এছাড়া, তাদের বৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে হবে এবং আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ দেখাতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ। প্রথমে pr.gov.sa এই ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে কাগজপত্র আপলোড করতে হবে এবং ফি জমা দিতে হবে। আবেদন অনুমোদনের জন্য ১ থেকে ৩ মাস সময় লাগতে পারে।
সৌদি আরবের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ আল-ফাহাদ বলেন, “এই প্রোগ্রামটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এটি আমদানি, রফতানি এবং স্থানীয় ব্যবসার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে।”
সৌদি আরবের এই রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম বিদেশি পেশাজীবী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অমূল্য সুযোগ হিসেবে কাজ করবে। দেশটির অর্থনীতির জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক মেধা ও বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে। তবে, আবেদনকারীদের জন্য শর্তগুলো এবং নিয়মাবলী মেনে চলা আবশ্যক, কারণ এটি তাদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা লাভের পথ উন্মোচন করবে।