অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ায় বিশ্ববাজারে আবারও আলোচনায় এসেছে স্বর্ণ। মূল্যস্ফীতির চাপ, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাই এই মূল্যবান ধাতুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ২,৩০০ ডলার। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে এই দাম প্রতি আউন্স ৫,০০০ ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে। মূলত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে স্বর্ণকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। যখন মুদ্রার মান কমে যায় বা শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়েন, যার ফলে এর চাহিদা ও দাম উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিবর্তে নিরাপদ বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। একই সঙ্গে, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বর্ণ যোগ করছে, যা এর চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া, বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনও একটি বড় সমস্যা। মুদ্রাস্ফীতির কারণে যখন টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, তখন বিনিয়োগকারীরা এমন সম্পদ খোঁজেন যা তাদের বিনিয়োগের মূল্য ধরে রাখতে পারে। স্বর্ণ এমন একটি সম্পদ যা ঐতিহাসিকভাবেই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে ভালো সুরক্ষা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, স্বর্ণের দাম ৫,০০০ ডলারের মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব। এর পেছনে কিছু যুক্তি রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের সময় স্বর্ণের দাম অনেক বেড়েছে। এছাড়াও, স্বর্ণ একটি সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ, যার সরবরাহ বাড়ানো সহজ নয়। যদি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের ওপরই ভরসা রাখবেন, যা এর দামকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে। তবে, স্বর্ণের এই মূল্যবৃদ্ধি বৈশ্বিক অর্থনীতির ভঙ্গুরতার ইঙ্গিত দেয়। তাই যেকোনো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।