শিরোনামঃ
জনতার মঞ্চ নিয়ে ‘বাতিল’ মামলা ফের চালু হচ্ছে: দেড় শতাধিক সাবেক আমলাকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা এশিয়ায় ঘুরছে জেনজির শনি: রিন্টু আনোয়ার কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীনের দাফন কুষ্টিয়ায় গাজায় নিহত আরও ৪৯, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘ আশ্রয়কেন্দ্র ভবন থেকে পড়ে চীনা অভিনেতার মৃত্যু সেই প্রাইভেট কারের ধাক্কায় আহত চার নারীর একজনের মৃত্যু গাজায় বোমা বর্ষন বাড়িয়েছে ইসরায়েল, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ফিলিস্তিনিরা সাবেক সার্জেন্ট মেজরের স্বীকারোক্তি: তার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে এক নারী সেনা আত্মহত্যা করেছিলেন চার্লি কার্কের স্ত্রীর আবেগঘন বার্তা: ‘আমি তোমার আদর্শকে কখনো মরতে দেব না’ আবু ধাবির নতুন ওয়েভ পুলে বিলাসিতার দৌড় : প্রত্যেক ঢেউতে $১৫০
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১২ অপরাহ্ন

পাঁচ মাসের রেকর্ড ভাঙল ডেঙ্গু, ছড়িয়েছে ৬০ জেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৮৩ বার
প্রকাশ: রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫
ডেঙ্গু

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪ হাজার ৩৪৫ জন এবং মারা যান ২৩ জন। অথচ মাত্র একমাসে অর্থাৎ জুনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৫১ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১৯। এছাড়া, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনেই মৃতের সংখ্যা ১৩।

দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চারটি জেলায় এই বছর এখন পর্যন্ত কোনও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। জেলাগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট এবং সুনামগঞ্জ। তবে সংক্রমণের হার অর্থাৎ রোগী বেশি পাওয়া গেছে দেশের ১০ জেলায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকাসহ, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও চাঁদপুর এবং উপকূলের পাঁচ জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালীতে রোগীর সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্তের ৭৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮৭ শতাংশ হয়েছে এসব জেলায়। উপকূলের পাঁচ জেলায় আক্রান্ত ৪৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও মৃত্যু ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ২০২৩। ওই বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা গেছেন এক হাজার ৭০৫ জন, যা আগের ২৩ বছরের সম্মিলিত সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে ২০২৫ সালের আগস্টে আমরা ২০২৩ সালের চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।

ডেঙ্গু সংক্রমণের এই চিত্র শুধু রাজধানীর নয়, দেশের প্রতিটি জেলার জন্যই বিপদ সংকেত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেশে প্রতিটি জেলায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ‘ব্রেটো ইনডেক্স’ ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লার্ভা ধ্বংস সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলেও দেশে অনেক এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং বা লার্ভা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জনবল সংকট, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলো এ কাজে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। এ কারণে অনেক এলাকায় নিভৃতে লার্ভা বেড়ে উঠছে এবং তা ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে।

‘সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও ডেঙ্গু মোকাবিলায় বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জানেন না কোথায় মশা ডিম পাড়ে, কীভাবে লার্ভা ধ্বংস করতে হয় কিংবা এডিস মশা কখন কামড়ায়। কেউ কেউ জানলেও দায়িত্ববান আচরণ করেন না। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙিনায় জমে থাকা পানির প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করেন না।’

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো— জলবায়ু পরিবর্তন এখন এডিস মশার বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টি, তাপমাত্রার ওঠানামা ও আর্দ্রতার তারতম্য এডিস মশার জীবনচক্রে সহায়তা করছে এবং ভাইরাস সংক্রমণ আরও দ্রুত হচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অল্প সময়ের বৃষ্টিতে যখন বিভিন্ন ছোট–বড় পাত্রে পানি জমে থাকে, তখন তা দ্রুত মশার প্রজননস্থলে রূপ নেয়।

‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি শুধু একটি রোগ নয়, বরং জলবায়ু, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সম্মিলিত সংকট, যার সমাধান জরুরি। এ সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন আর আগের মতো সহজভাবে মোকাবিলা করার অবস্থায় নেই। ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮ জন, ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে দুই জন, এছাড়া ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছেন। সিলেট ও রংপুর বিভাগে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

 


এ জাতীয় আরো খবর...