রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিষপান করেন ঢাকা ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ফিরোজা আশরাবী (২৮)। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পুলিশের দাবি, আশরাবী ঘটনার দুদিন আগে অনলাইন থেকে বিষ সংগ্রহ করেছিলেন এবং তিনি পরিকল্পিতভাবে সেই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ হেফাজতে এই মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে—থানায় আটক থাকা অবস্থায় ভিকটিমের কাছে বিষ পৌঁছালো কীভাবে? এ প্রশ্ন ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ও পদ্ধতিগত দুর্বলতা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
থানা পুলিশের হেফাজতে বিষপানের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ভাটারা থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও দুই নারী কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি থানায় আশরাবীর কাছে বিষ পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এক কর্মীসহ তৃতীয় লিঙ্গের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য— ফিরোজা আশরাবী পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই আত্মহননের পথ বেছে নেন। মূলত পারিবারিক কলহ ও দাম্পত্য সম্পর্কে জটিলতা থেকেই তিনি এ কাজ করেছেন।
পুলিশ জানায়, আশরাবী যেহেতু একজন উচ্চশিক্ষিত নারী, তিনি অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতেন। এছাড়া রিসাদের সঙ্গে তার মনোমালিন্য থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আইনি পরামর্শের জন্য তিনি ব্লাস্টের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই সূত্রে তিনি আটকের পর কৌশলে ব্লাস্টের মাধ্যমে বাসা থেকে বিষ এনে পান করেছেন।
ব্লাস্টের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। পরে ব্লাস্টের প্রধান প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মাহাপাড়ার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে ব্লাস্টের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “এ বিষয়ে যেহেতু একটি মামলা হয়েছে, তাই এটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার জেরে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোনও ব্যক্তির আত্মহত্যা শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুতর ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।