রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন

ইরানের পরমাণু ইস্যুতে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর নাকচ করল রাশিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩১ বার
প্রকাশ: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
Russia president building

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানকে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ শর্তে চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন- মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এমন একটি প্রতিবেদনকে ‘রাজনৈতিক অপপ্রচার’ অভিহিত করে নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া।

ইরান পরমাণু ইস্যুতে গত শনিবার (১২ জুলাই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যাক্সিওস। সেখানে তিনটি বেনামি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’র শর্তে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রতিবেদনের এই খবর উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো। রোববার (১৩ জুলাই) রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বারবার ও সুস্পষ্টভাবে জোর দিয়ে বলে এসেছি, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে সৃষ্ট সংকটের সমাধান একমাত্র রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়েই হতে পারে এবং আমরা পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তা করতে প্রস্তুত।’

খবরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা দায়িত্বশীল বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে তথ্যের সরকারি উৎস উদ্ধৃত করার, বিষয়গুলো নিয়ে ভালভাবে খোঁজখবর নেয়ার এবং ভুয়া সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা এবং পাশাপাশি ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে ইরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
বিষয়টি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে অনেক কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের পর ২০১৫ সালে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরও পাঁচটি দেশ তাতে স্বাক্ষর করে। তবে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর ২০১৮ সালে ওই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন।
এরপর ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে পরমাণু চুক্তির ইরানকে চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইরান আলোচনায় রাজি হয় এবং গত এপ্রিলে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় ওয়াশিংটন ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’র দাবি জানায়। তবে তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করে।
ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনার মধ্যে গত ১৩ জুন ইরানে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশাপাশি সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইরানও পাল্টা জবাব দেয়। এর মধ্যদিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘাত। যার ফলে পরমাণু আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।
২২ জুন ইসরাইলের সঙ্গে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্রও। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে তেহরানের কাছে ফোরদোতে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ইসফাহান ও নাতাঞ্জে পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ করে মার্কিন বোমারু বিমান। এই হামলায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির সঠিক মাত্রা এখনও জানা যায়নি। তবে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
 
১২ দিন পর যুদ্ধবিরতির মধ্যদিয়ে সংঘাতের অবসান ঘটে। সংঘাতের পর ইরানের সঙ্গে আবারও পরমাণু আলোচনার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তেহরান বলছে, পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসতে আগ্রহী ইরান। তবে শর্ত একটাই, ওয়াশিংটনকে ইরানে হামলার জন্য স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
 
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আচরণ বদলিয়ে সম্মানের সহিত প্রস্তুাব দিলে ভেবে দেখবে তেহরান। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও সামরিক হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ না দিলে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয় বলেও জানান আরাঘচি। তার দাবি, মার্কিন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি। 


এ জাতীয় আরো খবর...