ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলার সূচনা বক্তব্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর অনুমতিক্রমে এ বিচারপ্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে বিচারকাজ চলছে। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন নিজ দোষ স্বীকার করে ইতোমধ্যে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি পেয়েছেন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে সাবেক আইজিপিকে আদালতে হাজির করা হয় এবং প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশন জানায়, শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের ওপর আজকের শুনানি কেন্দ্রিত।
মামলার প্রধান অভিযোগসমূহ:
১. উসকানিমূলক বক্তব্য ও গণহত্যা:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের কর্মীদের যৌথ অভিযানে দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হন, আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ:
অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি কার্যকর করেন। এসব নির্দেশের অডিওপ্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রংপুরে ছাত্র হত্যা:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা:
রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার দায়ে একই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা:
আশুলিয়ায় ছয়জন নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগও মামলায় অন্তর্ভুক্ত।
রাজসাক্ষ্য ও পূর্ববর্তী রায়:
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয় এবং মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে। এর আগে ২ জুলাই আদালত অবমাননার আরেক মামলায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি তার বিরুদ্ধে প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার।
আরও মামলা চলমান:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে চারটি মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ আগামী ১২ আগস্ট। অন্যদিকে, গুম-খুন ও নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলার প্রতিবেদন দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে ২৪ আগস্ট।