রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের শিক্ষা বিপর্যয়

রেজওয়ান করিম / ২৮ বার
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশের কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ঠিকানা। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন সেখানে বসবাস করছে। তাদের অর্ধেকের বেশি শিশু-কিশোর। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।

আড়াই লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

জাতিসংঘের তথ্যমতে, কক্সবাজারের শিবিরে প্রায় ৪,৫০০ শিক্ষা কেন্দ্র চালু ছিল। তবে সহায়তা কমে যাওয়ায় এর বড় অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রায় আড়াই লাখ শিশু বর্তমানে স্কুলবঞ্চিত। মাত্র ৩০ শতাংশ শিশু কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, বাকিরা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

শিশুর গল্প: স্কুল থেকে শ্রমে

১৪ বছর বয়সী আরশাদ (ছদ্মনাম) একসময় প্রতিদিন ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারে যেত। কিন্তু কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাকে এখন একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে হচ্ছে। দিনে ১০ ঘণ্টা কাজের পরেও হাতে আসে মাত্র কয়েকশো টাকা। আরশাদের মতো অনেক শিশু এখন অল্প বয়সেই শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে, ১২ বছরের মরিয়মের পরিবার জানায়, শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ থাকায় তারা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। পরিবারটির মতে, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

‘হারানো প্রজন্ম’-এর শঙ্কা

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি অবিলম্বে এই সংকট সমাধান না করা হয় তবে রোহিঙ্গা শিশুদের একটি বড় অংশ স্থায়ীভাবে শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এতে তারা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হওয়ার বদলে নিরক্ষর প্রজন্মে পরিণত হবে— যা কেবল তাদের নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সংকট ডেকে আনতে পারে।

আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘাটতি

শিক্ষা খাতের জন্য প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তার মাত্র ৫০ শতাংশ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। বাকি অর্থ জোগাড় না হওয়ায় শিক্ষা কেন্দ্রগুলো চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক মানবিক সহায়তায় রোহিঙ্গা ইস্যু ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাচ্ছে, যা শিশুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

টেকসই সমাধানের দাবি

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, শুধু অস্থায়ী সহায়তা নয়— দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। শিশুদের শিক্ষা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কারিগরি ও জীবনমুখী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।

 

রোহিঙ্গা শিশুদের এই শিক্ষা সংকট কেবল তাদের ভবিষ্যৎ নয়, গোটা সমাজের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে এক ভয়াবহ “হারানো প্রজন্ম” তৈরি হবে— যা মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করে তুলবে।


এ জাতীয় আরো খবর...