তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আলোচনা আর মতবিনিময়ের ঢেউ বইছিল। শুধু একটি সরকারি সিদ্ধান্ত নয়, এটি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এদিন উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)-কে দুই ভাগে ভাগ করার সংশোধনী অধ্যাদেশ।
এনবিআর এবার দুটি নতুন ইউনিটে বিভক্ত হবে: রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, এই দুটি ইউনিটের প্রধানদের বাছাই করা হবে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে, প্রয়োজনে যেকোনো ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগের সুযোগ থাকবে।
রাজস্ব নীতি ইউনিট মূলত নীতিমূলক কাঠামো ও পরিকল্পনা তৈরি করবে, যেখানে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ইউনিট দায়িত্ব নেবে আদায়, হিসাবরক্ষণ ও প্রক্রিয়ার দক্ষতা নিশ্চিত করার। এভাবে কাজের স্পষ্টতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো হবে।
সরকারের এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষণ। চলতি বছরের ১২ মে “রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থা অধ্যাদেশ ২০২৫” জারি করার পর এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদ একটি কমিটি গঠন করে।
কমিটিতে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, এনবিআরের সদস্য, বিসিএস ট্যাক্সেশন ও কাস্টমস ক্যাডারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠন ও সংস্কার বিষয়ক পরামর্শ কমিটির সদস্যরা। তারা রাজস্ব অফিস ও কাস্টমস অফিস পরিদর্শন করেছেন, মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলো শুনেছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাব করেছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এই অধ্যাদেশ সংশোধন করার মূল উদ্দেশ্য হলো রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গতিশীলতা নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, “রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আলাদা করার মাধ্যমে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে। ব্যবসায়ী এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে।”
এনবিআরের এই সংস্কার একটি নতুন অধ্যায়। এটি শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন নয়; এটি একটি বিশ্বাস ও দায়িত্বের প্রতিশ্রুতি, যাতে দেশের রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের মতামত নেওয়া, কমিটির সুপারিশ গ্রহণ ও চূড়ান্ত খসড়া তৈরির মাধ্যমে এই অধ্যাদেশের সংশোধনী একটি পরিকল্পিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে রূপ নিয়েছে।
ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং সিনিয়র সহরকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।