রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

ভোটে ব্যয়সীমা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৯ বার
প্রকাশ: বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যয়সীমা বাড়াচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে কোনো কোনো আসনে ব্যয়সীমা পৌনে এক কোটিতেও পৌঁছাতে পারে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাবে এমন সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে বুধবার (০৩ মার্চ) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রার্থী ভোটার প্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন অথবা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশি হবে, সেটা ব্যয় করতে পারবেন। আগে ভোটার প্রতি ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা সবচেয়ে কম সেই অঙ্ক ব্যয় করা যেত। কিন্তু এখন যেটা সবচেয়ে বেশি হবে, সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীরা।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ হলে, ভোটার প্রতি ১০ টাকা ধরে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা যায়। তবে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের বিধান আছে, তাই সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীরা ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। বর্তমানে আইনে কোনো আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ হলে, ভোটার প্রতি ১০ টাকা হিসেবে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়সীমা হওয়ার কথা। কিন্তু সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ব্যয়সীমার কারণে ভোটার বেশি হলেও সীমার মধ্যেই থাকতে হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত বিধানটি বাস্তবায়ন হলে, তিন লাখ ভোটার হলে ৩০ লাখ টাকাই ব্যয় করতে পারবেন।

বর্তমান সীমানা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী, গাজীপুর-২ আসনে সবচেয়ে বেশি ভোটার। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার ঝালকাঠি-১ আসনে, দুই লাখ ১২ হাজার ১২ জন। প্রস্তাবিত আইনে গাজীপুর-২ আসনটি বহাল থাকলে, সেই আসনের প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবেন ৭৭ লাখ ৯৭ হাজার ২৬০ টাকা। আর ঝালকাঠি-১ আসনে, ভোটার প্রতি ১০ টাকা হিসেবে ২১ লাখ ২০ হাজার ১২০ টাকা হলেও, আসনটির প্রার্থীরা ব্যয় করতে পারবেন ২৫ লাখ টাকা।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের আরও বলেন, ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান এলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে হতে হবে। অনুদান সর্বোচ্চ কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নেওয়া যাবে। ভোটে অনিয়ম হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে একটি বা একাধিক বা পুরো আসন বাতিল করতে পারবেন।

কার্যক্রম স্থগিত ঘোষিত দলের নেতা-কর্মীরা প্রার্থী হতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কার্যক্রম করতে পারছেন না অর্থাৎ দলের নাম নিয়ে কেউ ভোটে অংশ নিতে পারছেন না। স্বতন্ত্র হিসেবে কেউ দাঁড়ালে সেটা পরে দেখা যাবে।

আইসিটিতে অভিযুক্তদের কেন প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করার প্রস্তাব রাখলেন না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার জন্য আরেক বিধান আছে, যে কোনো আদালতে কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন। তাই এটা করার দরকার নেই। এছাড়া, যে কোনো ফৌজদারি মামলায় ফেরারি আসামি হলে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।

ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য করার বিধানে অপব্যবহারের বিষয়টি সামনে আনলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে এটা করতে চাইনি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এটা করা হয়েছে। সামনে যদি মিসইউজ হয়, তবে আবার এটা রিভিউ করতে হবে।

ব্যয়সীমা বাড়ানোর সুযোগ রাখার যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনো আসনে জনসংখ্যা বেশি, কোথাও কম। তাই ভোটার সংখ্যা ধরে খরচের বিষয়টি নির্ধারণ না করলে কী ধরে করবেন? এটা বাস্তবতার নিরিখে করা হয়েছে।

সানাউল্লাহ বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি সহকারী রিটার্নিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারের কাছে জবাবদিহি করবেন।

অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান আরপিও থেকে তুলে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসার স্বশরীর উপস্থিত হলে নিজে পরখ করে দেখতে পারেন। এছাড়া ফেরারি আসামি হলে তাদের কী হবে-এমন বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান তুলে দেওয়া হয়েছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনিয়ম হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার রিপোর্টের ভিত্তিতে পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি।

মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব ভেটিং করার জন্য পাঠিয়েছে ইসি। সেখানে ইসির প্রস্তাবে কোনো পর্যবেক্ষণ না এলে তা যাবে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেলেই কেবল সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।


এ জাতীয় আরো খবর...