মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৬ অপরাহ্ন

লোক সংগীতশিল্পী আব্দুল আলীমের প্রয়াণ দিবস

রেজওয়ান করিম / ৩৩ বার
প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আজ, ৫ সেপ্টেম্বর, লোকসংগীতের কালজয়ী শিল্পী আব্দুল আলীমের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৭ সালের এই দিনে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তার সুরের জাদু আজও বেঁচে আছে কোটি মানুষের হৃদয়ে।

আব্দুল আলীম ছিলেন বাংলাদেশের লোকসংগীতের এক কিংবদন্তি। ১৯৩১ সালে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় তার জন্ম। দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সুযোগ তেমন একটা না পেলেও সংগীতের প্রতি তার ছিল গভীর টান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তিনি প্রথম কলকাতা রেডিওতে গান পরিবেশন করেন। এরপর তার জীবন যেন শুধুই সংগীতের জন্য উৎসর্গীকৃত ছিল।

১৯৪৮ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা রেডিওতে শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। রেডিওতে নিয়মিত গান করার পাশাপাশি তিনি গ্রামোফোন রেকর্ডেও গান গেয়েছেন। লোকসংগীতকে আধুনিক রেকর্ডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার দরদী কণ্ঠে “সর্বনাশা পদ্মা নদীর পারে”, “নাইয়া রে নায়ের বাঁধন”, “হলুদিয়া পাখী”, “এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া” এর মতো অসংখ্য গান আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

আব্দুল আলীমের গানের মূল শক্তি ছিল তার স্বকীয়তা। তিনি শুধু লোকসংগীত গাইতেন না, বরং গানের গভীরে মিশে যেতেন। তার সুরে ফুটে উঠত বাংলার মাটি ও মানুষের সহজ সরল জীবনযাত্রা, তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না। তার কণ্ঠে বাউল, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, দেহতত্ত্ব, জারি-সারি গানগুলো যেন নতুন জীবন পেত। লোকসংগীতের এমন কোনো শাখা ছিল না যেখানে তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেননি।

সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৭৭) এবং বাংলা একাডেমি পদক (১৯৭৬) লাভ করেন। তার সুর ও গান আমাদের লোকসংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে লোকসংগীতের ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছে।

আজকের দিনে এই মহান শিল্পীকে স্মরণ করে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তার গানগুলো আজও আমাদের সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে।


এ জাতীয় আরো খবর...