বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে বিগত ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে তিনটি ভিন্ন মহাদেশের ৩ দেশের তিনজন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়তে হলো। ফ্রান্স, নেপাল ও জাপান – এই তিন দেশের ক্ষমতার পালাবদল প্রমাণ করে বৈশ্বিক রাজনীতি কতটা অনিশ্চিত, পরিবর্তনশীল ও অস্থির হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু (François Bayrou), যিনি মার্চ ২০২৫-এ দায়িত্ব নিয়েছিলেন, নয় মাসের মাথায় সংসদীয় আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। তার সরকারের ব্যয় হ্রাস ও বাজেট ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়ে। এই পরাজয় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জন্যও বড় ধাক্কা। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সেবাস্তিয়ান লেকর্নু (Sébastien Lecornu), যিনি “গভীর রাজনৈতিক পরিবর্তন” আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নেপালের ইতিহাস রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভরপুর। দেশটির প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলি (K.P. Sharma Oli) ১৫ জুলাই ২০২৪ থেকে তার চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগে দেশব্যাপী তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। কाठमান্ডুর পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত আগুনে জ্বলে ওঠে। নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ৯–১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ জনচাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। নেপালের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা (Shigeru Ishiba) কম এক বছর দায়িত্ব পালনের পর ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (LDP) একাধিক নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও সরকারের নীতির প্রতি জনঅসন্তোষ ব্যাপক হওয়ায় তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। জাপানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণত স্থিতিশীল হলেও এত দ্রুত নেতৃত্ব পরিবর্তন দেশটির নীতি ও অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি করতে পারে।
রাজনীতিতে হঠাৎ নেতৃত্ব পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। কিন্তু মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে তিনটি ভিন্ন মহাদেশের তিনজন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারানো সত্যিই নজিরবিহীন। সাধারণত একই অঞ্চলে অস্থিরতা দেখা যায়, কিন্তু এবার ইউরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়া – তিনটি ভিন্ন ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঢেউ দেখা দিল।
ইউরোপে ফ্রান্সের অস্থিতিশীলতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা আঞ্চলিক সম্পর্ক ও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।
এশিয়ায় জাপানের নেতৃত্ব পরিবর্তন আঞ্চলিক অর্থনীতি ও বৈশ্বিক কূটনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিগত ৪৮ ঘন্টায় ঘটে যাওয়া এই তিনটি ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, রাজনীতি কখনোই স্থির থাকে না। নেতৃত্ব পরিবর্তনের এহেন অভূতপূর্ব স্রোত শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকেই প্রভাবিত করবে না, বরং বৈশ্বিক কূটনীতি, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও এর প্রতিফলন দেখা যাবে।