মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

এক মাসের ব্যবধানে নিশ্চিহ্ন গাজা সিটি : স্যাটেলাইটে ধরা পড়ল ধ্বংসযজ্ঞ

রেজওয়ান করিম / ৭৯ বার
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে গাজা শহরের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবিগুলো প্রমাণ করে, যেখানে এক মাস আগেও বাড়িঘর, বাজার এবং জনবহুল এলাকা ছিল, সেখানে এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ধারণ করা স্যাটেলাইট চিত্রের সঙ্গে আগস্ট মাসের শুরুর দিকের চিত্রের এক ভয়াবহ পার্থক্য দেখা যায়। আগস্ট মাসে যেখানে জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং সুনির্দিষ্ট ভবনগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল, সেপ্টেম্বর মাসের ছবিতে সেখানে কেবল ধূসর ধ্বংসাবশেষের স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই। এই পরিবর্তন ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের তীব্রতা এবং ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরিবর্তনগুলো হঠাৎ করে ঘটেনি, বরং এটি ইসরায়েলি বাহিনীর পরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক হামলার ফল। নির্দিষ্ট কিছু এলাকা, যেমন আল-রিমালা এবং আল-নাসেরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল, সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই এলাকাগুলোর ভবনগুলো এক মাসের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা যুদ্ধের নির্মমতা প্রমাণ করে।

ধ্বংসের পরিধি ও কার্যকারিতা

  • এক মাস আগের তুলনায় বহু মাল্টিস্টোরি ভবন “পুরোদমে” ধ্বংস হয়েছে। সেখানকার একাধিক ব্লক (পুরো রোয়া) ফ্ল্যাট করে দেওয়া হয়েছে।

  • Zeitoun এলাকা বিশেষভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত; সেখানে ১,৫০০টিরও বেশী বাড়ি ও ভবন ধ্বংস হয়েছে—এমনকি অনেক জায়গায় কোনো ধরণের কাঠামোই অবশিষ্ট নেই।

  • Remal, Sheikh Radwan, Tuffah ইত্যাদি নিকটাঞ্চলগুলেও ধ্বংসের চিত্র স্পষ্ট; স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন প্রভৃতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সময়গত তুলনা: ১ মাসে কী পরিবর্তন ঘটেছে

  • স্যাটেলাইট চিত্র ও স্থানীয় তথ্য মতে, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর বা বিশেষ করে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু এর মধ্যে ধ্বংসের ধারা একেবারেই বাড়িয়েছে।

  • যেখানে এক মাস আগে বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, শহরের নানান অংশ পুরোপুরি কাজ করছিল — বাজার, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান — সেখানে এখন অনেক জায়গায় ধ্বস্তুপ আর ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছুই উপলব্ধ নয়।

  • মানুষের বসবাসযোগ্য এলাকা কমে এসেছে; যেতে বাধ্য হচ্ছেন দক্ষিণ বা কেন্দ্রীয় গাজার দিকে, কারণ উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে বিপদগ্রস্ত ও অব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠছে।

এই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজায় মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, পানি, এবং চিকিৎসার মতো জরুরি সহায়তার প্রয়োজন বেড়েছে, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের কারণে ত্রাণ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শত শত পরিবার ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি হারিয়ে গেছেন, আশ্রয় ও মৌলিক সেবা পেতে পারছেনা অনেকেই। সাহায্য পৌঁছানোর রাস্তা ও নিরাপদ এলাকা সীমিত; যেসব “হিউম্যানিটারিয়ান জোন” ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানেও অনেকেই ফিরতে পারছেন না বা আশ্রয় পাচ্ছেন না। ধ্বংসের এই প্রকোপ শুধু বাসস্থান নয়, পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ–পানির মতো মৌলিক অবকাঠামোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিএনএন-এর এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন একটি নীরব ও ভয়াবহ সত্য তুলে ধরেছে—কীভাবে এক মাসের ব্যবধানে একটি শহর তার অস্তিত্ব হারিয়েছে এবং মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। এই চিত্র আন্তর্জাতিক মহলের জন্য একটি কঠোর বার্তা বহন করে, যা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।


এ জাতীয় আরো খবর...