জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে (ভিপি) আবদুর রশিদ জিতু এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস-পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস-নারী) পদে আয়েশা সিদ্দীকা মেঘলা বিজয়ী হয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের এ ফলাফল ঘোষণা করে জাকসু নির্বাচন কমিশন।
অন্য পদগুলোতে নির্বাচিতরা হলেন শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল), পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল), সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), সাংস্কৃতিক সম্পাদক মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র), সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল), নাট্য সম্পাদক মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ক্রীড়া সম্পাদক-মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল), তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল), সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী) নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ) মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল), স্বাস্হ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল) এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে ৩ জন নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান, নুসরাত জাহান ইমা এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে ৩ জন মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা, মো. আলী চিশতী নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী সদস্যরা সবাই শিবির সমর্থিত প্যানেলের।
জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের জাকসু নির্বাচনে ১১ হাজার ৭৫৯ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ১৭৭ জন প্রার্থী।
জিএস পদে মো: মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে লড়াই করেন ৯ জন। প্রার্থীদের মধ্যে আবু রায়হান কবির রাসেল ৬৪ ভোট, সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া ১২৩ ভোট, তানজিলা হোসাইন বৈশাখী ৯৪১, শাকিল আলী ৯৫৯, জাহিদুল ইসলাম ১১০, আবু তৌহিদ মো. সিয়াম ১২৩৮ এবং তানবীর হোসেন ১৫৯ ভোট পেয়েছেন।
ভিপি পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত আব্দুর রশিদ জিতুর সঙ্গে লড়াই করেন জন। এর মধ্যে আরিফ উল্লাহ ২৩৯২ ভোট, শেখ সাদী হাসান ৬৪৮, রাব্বি হোসেন ৭০, আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ১২১১ এবং সোহানুর রহমান ১১৫ ভোট পেয়েছেন।
একনজরে জাকসু নির্বাচনের ফল:
১. ভিপি- আব্দুর রশিদ জিতু (স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল), ভোট: ৩৩৩৪
২. জিএস- মো: মাজহারুল ইসলাম (শিবির প্যানেল) (৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এই পদে), ভোট: ২৯৩০
৩. এজিএস (পুরুষ)- ফেরদৌস আল হাসান (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৩৫৮
৪. এজিএস (নারী)- আয়েশা সিদ্দীকা মেঘলা (শিবির প্যানেল), ভোট: ৩৪০২
৫. শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৪২৮
৬. পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক- মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল), ভোট: ২১১১
৭. সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক- মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ভোট: ১৭০৯
৮. সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র), ভোট: ২০১৮
৯. সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মো: রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল), ভোট: —
১০. নাট্য সম্পাদক- মো রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ভোট: ১৯২৯
১১. ক্রীড়া সম্পাদক-মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র), ভোট: ৫৭৭৮
১২. সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী)- ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল), ভোট: ১৯৭৬
১৩. সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ)- মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল), ভোট: ২১০৫
১৪. তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক- মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৪৩৬
১৫. সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক- আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস), ভোট: ১৬৯০
১৭. সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ)- মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৪৪২
১৮. স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক- হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৬৫৩
১৯. পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক- মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৫১৯
২০. কার্যকরী সদস্য
পুরুষ-১: মো আলি চিশতী (বাগছাস)
পুরুষ-২: মো. আবু তালহা (শিবির প্যানেল)
পুরুষ-৩: তরিকুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
নারী-১: নাবিলা বিনতে হারুণ (শিবির প্যানেল), ভোট: ২৭০০
নারী-২: ফাবলিহা জাহান নাজিয়া (শিবির প্যানেল), ভোট: ২০৭৫
নারী-৩: নুসরাত জাহান ইমা (শিবির প্যানেল), ভোট: ৩০১৪
এর আগে আজ দুপুর আড়াইটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশনের ভোট গণনা শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার শুরুতে হল সংসদের ফল ঘোষণা করা হয়। একে একে ২১টি হল সংসদের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদে বিজয়ী যারা
১৩ নং (ছাত্রী) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন নাহাদাতুন হাসানা। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মোহসিনা তুবা। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন সাদিয়া মেহজাবিন।
বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ফারহানা রহমান, জিএস হয়েছেন ফাতেমা তুজ–জোহরা। এজিএস রায়হানা সরকার।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন অমিত কুমার বণিক। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদুল হাসান। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন মির্জা আদনান ইসলাম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন সিফাত উল্লাহ।জিএস হয়েছেন মাহমুদুল হাসান। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন তারিক আহমেদ।
ফজিলতুন্নেসা হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ঐশী সরকার (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ফারজানা তাবাসসুম। এজিএস প্রমা রাহা।
শহীদ রফিক-জব্বার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদি হাসান। জিএস হয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন আরিফুল ইসলাম।
২১ নং (ছাত্র) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ইবনে শিহাব। জিএস হয়েছেন ওলিউল্লাহ মাহাদী। এজিএস হয়েছেন তুষার আহমেদ।
কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রাকিবুল ইসলাম। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন আলী আহমেদ। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন সামিন ইয়াসির।
আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন জিএমএম রায়হান কবীর। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন আবরার শাহরিয়ার। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন রিপন মন্ডল (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)।
মীর মশাররফ হোসেন হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন খালেদ জুবায়ের। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন শাহরিয়ার নাজিম। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন আরাফাত হোসেন।
মওলানা ভাসানী হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল হাই স্বপন। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন হৃদয় পোদ্দার। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন রাকিব হাসান।
শহীদ সালাম–বরকত সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মারুফ হোসেন। জিএস হয়েছেন মাসুদ রানা, এজিএস আবরার আজিম ভুঁইয়া।
আলবেরুনী হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন রিফাত আহমেদ শাকিল। জিএস হয়েছেন মুনতাসির বিল্লাহ খান। এজিএস সাদমান হাসান খান।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন বুবলী আহমেদ (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস হয়েছে সুমাইয়া খানম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা), এজিএস প্রার্থী নেই।
১০ নং (ছাত্র) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন আসিফ মিয়া। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন নাদিম মাহমুদ।
১৫ নং (ছাত্রী) হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শারমীন খাতুন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। জিএস মেহনাজ মোহনা। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন শাহানা আক্তার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হলসংসদ নির্বাচনের ভোট গণনায় ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় জাকুসর ভোট গ্রহণ। ভোট চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ওই দিন রাত সোয়া ১০টায় শুরু হয় গণনা। আর আজ বেলা আড়াইটার পরে শেষ হলো ভোট গণনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ভোট গণনা করা হয়।
ভোট গণনা শেষ হওয়ার সময়সীমা ও নির্বাচনের ফল প্রকাশ নিয়ে দু’দিন ধরে কয়েক দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বিকেল ৩টার দিকে জানান, সব হলের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। সর্বশেষ তার হলের ভোট গণনা বাকি ছিল, সেটাও শেষ হয়েছে।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ। জাকসুর ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী।
কোন পদে কত প্রার্থী
চলতি বছরের জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে প্রার্থী ৬ জন, এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী ছিলেন।