জুলাই আন্দোলনে সমন্বয়কদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন কর্নেল তারিক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজান। সেসময় এক সামরিক কর্তা দম্ভ নিয়ে বলেছিলেন, ২০২৩ সালে বিএনপির এক আন্দোলন দমনে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে তার। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে লিখিত সাক্ষ্যে এসব কথা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। তখনকার তাদের গঠিত সমন্বয়ক কমিটিতে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে অন্যতম সহযোদ্ধা ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরবর্তীতে যা রূপ নেয় গণআন্দোলনে। নাহিদের দেয়া একদফার দাবির মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের।
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলছে। তার সঙ্গে আসামি করা হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ মামুন। শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত অর্ধশত ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন। যার মধ্যে জুলাই শহিদ পরিবার, আহত, আন্দোলনকারী, চিকিৎসক ও পুলিশ।
এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
জবানবন্দীতে নাহিদ ইসলাম জানান, আন্দোলনের সময় ডিজিএফআই আন্দোলন থামিয়ে দিতে প্রস্তাব দেয়, দেয়া হয় হুমকিও। হাসনাত ও সারজিসকে ব্যবহার করে আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টাও করা হয়।
নাহিদের বক্তব্যে উঠে আসে, সারজিস ও হাসনাতকে কয়েকবার আমন্ত্রণ জানায় আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীরা, যা না করে দেন নাহিদ।
আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে কর্নেল তারিক চেষ্টা চালিয়ে যান। পরে যুক্ত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজান। তিনি সমন্বয়কদের সঙ্গে সমঝোতা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সমন্বয়কদের আশ্বাস দেয়া হয়, সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। এসময় তাদের বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। রাজি না হওয়ায় দেয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। আর গুম করা হয় নাহিদসহ কয়েকজনকে।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন তাদের পদ্মাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পরপরই তিন মন্ত্রী নওফেল, আনিসুল হক এবং আরাফাত ও সেখানে যান। পরবর্তীতে ডিজিএফআইসহ অন্যান্য সদস্যরা মন্ত্রীদের সঙ্গে মিটিংয়ের প্রস্তাব দেন সমন্বয়কদের। মন্ত্রীদের সঙ্গে মিটিং করার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে দেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘২ আগস্ট ইউনিসেফ প্রকাশ করে আন্দোলনে মারা গেছে অন্তত ৩২ শিশু, যা অস্বীকার করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই সময় গোপন তথ্যে তারা জানতে পারেন লং মার্চ টু ঢাকা যেন সফল না হয় তাই আবারও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয় সব ইন্টারনেট সংযোগ। একদিন আগে সেদিনই একদফার ঘোষণা দেন সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।’