মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

ঢাকার ডিজে পার্টিতে ভয়ংকর মাদক ‘হ্যাপী ড্রাগ’ সরবরাহকারী চক্র ডিএনসির জালে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৫ বার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি ও সোসাইটিতে ড্রাগ সরবরাহকারী চক্রের মূলহোতাসহ সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে রেকর্ড পরিমাণ এমডিএমএ (এক্সটাসি/মলি/হ্যাপি ড্রাগ), কুশ, গাঁজা, কিটামিন, নগদ টাকা, মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন–মো. জুবায়ের, জি এম প্রথিত সামস, আসিফ মাহবুব চৌধুরী, অপূর্ব রায় ও সৈয়দ শাইয়ান আহমেদ।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএনসি মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ।

সংবাদ সম্মেলনে মো. হাসান মারুফ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়— আসামি মো. জুবায়েরসহ স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া প্রযুক্তি-দক্ষ, শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির বেশ কয়েকজনের একটি চক্র গাঁজা, কুশ, এমডিএমএ ও কেটামিনসহ অন্যান্য আধুনিক মাদক পার্সেলযোগে উন্নত দেশ থেকে আমদানি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরে পার্টি ড্রাগ হিসেবে বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে এবং অভিজাত সোসাইটিতে সরবরাহ করছে।

সম্প্রতি মাদকের একটি চালান ডাকযোগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসবে— এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পল্টনের পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাক শাখা থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আগত এয়ার পার্সেল তল্লাশি করে একটি কাগজের কার্টনের ভেতর বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের চকলেটের নীচে লুকানো অবস্থায় একটি বাবল পেপারে মোড়ানো স্বচ্ছ পলি প্যাকেটে রক্ষিত লালচে বর্ণের এমডিএমএ ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তারপর জব্দকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পার্সেলটির প্রাপক, মাদক চক্রের অন্যতম হোতা মো. জুবায়েরের অবস্থান শনাক্ত করে ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মো. জুবায়ের জানান— এই পার্সেলটি যুক্তরাজ্য থেকে তার পূর্বপরিচিত অরণ্য ডাকযোগে অরণ্যের বন্ধু অপূর্ব রায়ের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে পাঠিয়েছে। যা তাকে রিসিভ করে তার আরেক বন্ধু জি এম প্রথিত সামসের নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এর বিনিময়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেবে বলে জানায়। কাজটি করার জন্য অরণ্যের কথায় প্রথিত তাকে বিকাশের মাধ্যমে তিন বারে ১৫-১৬ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করে।

ডিজি আরও জানান, আসামি মো. জুবায়েরের বর্ণনামতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এই আধুনিক মাদক চোরাকারবারি চক্রের অন্যতম হোতা জি এম প্রথিত সামসের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানিকৃত ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য এমডিএমএ ট্যাবলেট, গাঁজা ও কেটামিন নামক মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, জুবায়ের এবং জি এম প্রথিত সামসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে আসিফ মাহবুব চৌধুরীর বাসা ঘেরাও করে তাকে হাতেনাতে এমডিএমএ, গাঁজা, কুশ ও নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি জুবায়েরের দেওয়া তথ্যমতে অপূর্ব রায়কে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণাদি জব্দ করা হয়। অপূর্বর দেওয়া তথ্যে সৈয়দ শায়ান আহমেদকে গাঁজা ও এমডিএমএ চালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণাদি জব্দ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আসামিদের মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।

এমডিএমএ কী? জানুন এর ক্ষতিকর প্রভাব

এমডিএমএ একটি কৃত্রিম সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ, যা উত্তেজক ও ভ্রমসৃজনকারী প্রভাব ফেলে। এটি সাময়িক আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ডিএনসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের নতুন কৌশল প্রতিরোধে কুরিয়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নজরদারি ও অভিযান আরও জোরদার করা হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।


এ জাতীয় আরো খবর...