(পর্ব-১)
———
স্বাধীনতার পর পর আইভি রহমানের অনুরোধে তার বড় বোনের ছোট ছেলে তারেক সিদ্দীকীকে শেখ মুজিবর রহমান রক্ষী
বাহিনীতে অফিসার পদে নিয়োগ দেন এবং একই সময় মাসুদ উদ্দিন ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসাবে রক্ষী বাহিনীর অফিসার নিযুক্ত হন। দু’জনের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর রক্ষী বাহিনী বিলপ্তি হয়ে গেলে বাহিনীর সকল সদস্যকে বিশেষ বিবেচনায় সেনা বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত পল্লবীতে অবস্থিত স্টাফ কলেজে ঐ সকল অফিসারদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে অনেক সেনা অফিসার স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ বিরতিতে আসেপাশে ঘুরাঘুরি করতেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মেজর আলাউদ্দিন। তিনি বিশিষ্ট ভদ্রলোক ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন। একদিন স্থানীয় একজন বৃদ্ধা তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলো: বাবা,তোমাকে জেনারেল হিসাবে দেখতে চাই। সেই দোয়া করি। খুব আফসোসের সঙ্গে মেজর আলাউদ্দিন সেদিন বলেছিলেনঃ খালাম্মা, আমরা যারা রক্ষী বাহিনী থেকে এসেছি, আমাদের মিলিটারি একাডেমির ডিগ্রী নেই। ফলে মেজরের পর আমাদের অবসর যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই।
যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালে মেজর আলাউদ্দিনসহ সকল রক্ষী বাহিনীর অফিসাররা ঠিকই অবসরে চলে গেলো। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো শুধু মেজর মাসুদ উদ্দিন আর মেজর তারেক সিদ্দিকীর বেলায়। কারণ তাদের দু’জনের খুঁটির জোর ছিলো অনেক বেশী।
তারা ছিলেন, বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার পারিবারিক আত্মীয়।
মেজর মাসুদ উদ্দিন ছিলেন বেগম জিয়ার ছোট ভাই মেজর সাইদ ইস্কান্দারের ভায়রা ভাই। আর মেজর তারেক সিদ্দিকী ছিলেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামীর ছোট ভাই।
১৯৯১সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর আত্মীয়তার প্রভাব খাটিয়ে সেনা বাহিনীর আইন ভঙ্গ করে মাসুদ উদ্দিন লেঃ কর্নেল পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন এবং
লেঃ কর্নেল মাসুদ উদ্দিনের ব্যক্তিগত সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে একেই প্রক্রিয়ায় মেজর তারেক সিদ্দিকীকেও লেঃ কর্নেল বানিয়ে দেন।পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা ব্রি:জে: সাফায়েত জামিলকে (সাবেক উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় ছেলে আর সৈয়দ আশ্রাফের ছোট ভাই) দিয়ে শেখ হাসিনা, তারেক সিদ্দিকীকে এক বছরের মধ্যে তিনটি প্রোমোশন দিয়ে এক লাফে মেজর জেনারেল বানিয়ে দেন এবং সেখান থেকে অবসরে গিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতায় আসার পর সেই আত্মীয়তার পরিচয়ে লেঃ কর্নেল মাসুদ উদ্দিনও প্রোমোশন বাগিয়ে নিয়ে একেবারে মেজর জেনারেল পদে উপনীত হন।
যেন এই রকম:-শেখ হাসিনা তার আত্মীয়কে যদি মেজর জেনারেল বানাতে পারেন তবে বেগম জিয়ার আত্মীয়কে কেন বানানো যাবে না। পারলেতো মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিনকে সেনা প্রধান বানিয়ে দেন কিন্তু দুভার্গ্যবশতঃ বেচারার মিলিটারী একাডেমির ডিগ্রী ছিল না। তবে,আত্মীয়তার সুবাদে ২০০৫ সালে নবম পদাতিক ডিভিশনের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মেজর জেনারেল মাসুদকে বিশ্বস্ত মনে করে এ ডিভিশনের জিওসি পদে নিয়োগ দেন।
অথচ এই মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিনের নেতৃত্বেই ষড়যন্ত্র করে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে বিতর্কত ওয়ান ইলেভেন বা এক এগারো ঘটিয়ে নিজেকে তথাকথিত গুরুতর অপরাধ দমন জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ঘোষণা দেয়।তার নির্দেশে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিবিদের আটক করে বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তিকে বিতর্কিত করে অসৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে আনীত অভিযোগের জের ধরে তারেক রহমানকে অমানুষিক নির্যাতনের মুখোমুখি করে। পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার ভয়াবহ অবনতি হলে আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাকে লন্ডন পাঠিয়ে দেয়া হয়।
প্রায় দুই বছর এই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিনদের বদৌলতে ক্ষমতায় এসেই মাসুদ উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে আস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনে একাধিক বার সময় বর্ধিত করে কমিশনার নিযুক্ত করে রাখেন এবং তার অবসরের পর তাকে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য বানান।
-চলবে……