মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে আর্থিক স্বচ্ছতায় ঘাটতি — যুক্তরাষ্ট্রের ৮ সুপারিশ ও করণীয়

রেজওয়ান করিম / ৮২ বার
প্রকাশ: রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত বার্ষিক ‘ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’-ে (২০২৫) বলা হয়েছে যে, বাজেট প্রণয়ন, বছরের শেষের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও নির্বাহী বিভাগে ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ন্যূনতম মানদণ্ডে পুরোপুরি পৌঁছায়নি। রিপোর্টে মোট ১৩৯টি দেশের মধ্যে ৬৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রিপোর্টে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি ইতিবাচক মন্তব্য থাকলেও, ওই সংস্কারগুলো স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি—বছরের শেষের আর্থিক প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ না হওয়া, নির্বাহী বিভাগের ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ অনুপস্থিত থাকা এবং নিরীক্ষা সংস্থার স্বাধীনতায় ঘাটতির মতো সমস্যার কথা সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মূল ৮টি সুপারশি (সংক্ষিপ্ত):
১) বছরের শেষে চূড়ান্ত আর্থিক/হিসাব প্রতিবেদন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা। 
২) বাজেট নথি আন্তর্জাতিক মানঅনুযায়ী প্রস্তুত ও প্রকাশ করা। 
৩) নির্বাহী (executive) কার্যালয়ের খরচ আলাদা করে দেখানো এবং বাজেটে সেগুলোর প্রতিফলন নিশ্চিত করা। 
৪) রাজস্ব ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বাজেটে উপস্থাপন করা। 
৫) সর্বোচ্চ নিরীক্ষা সংস্থার স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নিশ্চিত করা; তাদের পূর্ণযোগাযোগ ও তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা।
৬) নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো এবং বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা। 
৭) প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ-সংক্রান্ত চুক্তি ও মূল তথ্য উন্মুক্ত রাখা। 
৮) সরকারি ক্রয় (procurement) এবং চুক্তি সম্পর্কিত তথ্য উন্মুক্ত করা।

রিপোর্টে দেখা গেছে যে, আগের প্রশাসন বাজেটের প্রস্তাবনা অনলাইনে প্রকাশ করলেও, বছরের শেষের চূড়ান্ত হিসাব সময়মতো দেওয়া হয়নি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর (SOE) অর্থনৈতিক অবস্থার পূর্ণ চিত্র আড়ালেই থেকে গেছে—এগুলো স্বচ্ছতার বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

কিছু সংবাদসংস্থা তুলে ধরেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন চুক্তি পর্যালোচনা ও চলমান কিছু চুক্তি স্থগিত করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য হিসেবে ধরা হয়েছে; তবে রিপোর্ট বলছে, এই ধরণের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর স্বচ্ছতা স্থাপন করার জন্য যথেষ্ট নয় যদি তথ্য-প্রকাশ ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়া শক্ত না করা হয়।

রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক প্রভাব:
রিপোর্টে চিহ্নিত সমাধানগুলো কার্যকর করলে সরকারের ওপর পারদর্শিতা বাড়বে, সরকারি অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণের আস্থা ফিরে পেতে সাহায্য করবে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা ও ঋণশর্তে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে—অন্যথায় অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন সতর্কতাও রিপোর্টে রয়েছে।

কী করা উচিত:

  • জাতীয় বাজেট ও চূড়ান্ত হিসাব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সহজে অনুসন্ধানযোগ্য ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে এবং প্রকাশ-সূচি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা উচিত।

  • নির্বাহী ব্যয়ের আলাদা শ্রেণীবিভাগ ও ব্যয়ের প্রমাণাদি নিয়মিত প্রকাশের মাধ্যমে দপ্তরীয় অদৃশ্য ব্যয় উন্মোচন করতে হবে।

  • জাতীয় নিরীক্ষা সংস্থার স্বতন্ত্রতা কায়েম করে তাদের রিপোর্ট-প্রকাশ ও অনুসন্ধান ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

পেশাদার ও রাজনীতিক প্রতিক্রিয়া (সংক্ষিপ্ত): বিভিন্ন অনলাইন প্রকাশনা ও বিশ্লেষকরা রিপোর্টের ভাষ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে; তাদের মূল্যায়নে রিপোর্টের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না হলে আর্থিক স্বচ্ছতার মানে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি সম্ভব নয়—আরওও বলা হয়েছে, সুপারিশগুলো রাজনৈতিক সংকল্প ছাড়া কার্যকর করা কঠিন।

সিদ্ধান্ত: যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতাকে কেন্দ্র করে গ্রহনযোগ্য একখানা চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে এবং স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে কী উন্নয়ন করা প্রয়োজন। সরকারের জন্য এখন তা হলো—কেবল ঘোষণায় নয়, বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছতা ও নিরীক্ষা মেনে চলার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া। ফুটে উঠা পারপাস হলে তা দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি আস্থা পুন:প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সাহায্য করবে।


এ জাতীয় আরো খবর...