গাজার চলমান সংঘাত এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে ঘিরে আবারও সামনে এসেছে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের প্রশ্ন। ক্রমেই বাড়ছে প্যালেস্টাইনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা। তবে, এখনো অনেক প্রভাবশালী শক্তি স্বীকৃতি দেয়নি। এই স্বীকৃতি আদৌ কী বদল আনছে বিশ্ব কূটনীতিতে?
চলতি বছর প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় দেশ। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স ও পর্তুগাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লাক্সেমবুর্গ, মাল্টা, মনাকো ইত্যাদি দেশও প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেওয়া তালিকায় যোগ দিচ্ছে। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র কার্যকর পথ।
প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশ একে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৩৯টি দেশ প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
এশিয়ার দেশগুলো: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীনসহ অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র
আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ
লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশ
তবে, এখনো কিছু বড় শক্তি প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি। এদের মধ্যে রয়েছে—
যুক্তরাষ্ট্র
জার্মানি
ফ্রান্স
জাপান
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু দেশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি।
অঞ্চল/মহাদেশ | স্বীকৃতি দিয়েছে (দেশের উদাহরণ) | স্বীকৃতি দেয়নি (দেশের উদাহরণ) |
---|---|---|
এশিয়া | ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ইরান | জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া |
আফ্রিকা | মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা | কিছু ছোট আফ্রিকান দেশ এখনো নিরপেক্ষ |
ইউরোপ | স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র | জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস |
উত্তর আমেরিকা | কিউবা, নিকারাগুয়া | যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো |
লাতিন আমেরিকা | ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, চিলি, উরুগুয়ে | অধিকাংশই স্বীকৃতি দিয়েছে (প্রায় সবাই) |
ওশেনিয়া | কিছু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র | নিউজিল্যান্ড |
মোট চিত্র:
জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৩৬ টি দেশ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
স্বীকৃতি দেয়নি মূলত পশ্চিমা শক্তি ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা—যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।
কূটনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি – আন্তর্জাতিক পরিসরে প্যালেস্টাইন একটি বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে অবস্থান জোরদার করে।
জাতিসংঘে প্রভাব – সাধারণ অধিবেশনে সমর্থন বাড়ে, যদিও নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতার কারণে পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ এখনও অসম্ভব।
মানবাধিকার ইস্যুতে জোরালো অবস্থান – ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বেশি আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়।
অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তা – স্বীকৃতি পাওয়া দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, সাহায্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বাড়ে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মনে করে, ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের জন্য আলাদা দুটি রাষ্ট্র গঠন ছাড়া স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে একে জোরালোভাবে সামনে এনেছেন বিভিন্ন বিশ্বনেতা। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা এ বিষয়ে দ্বিধান্বিত অবস্থান নিয়ে চলছে।
সারসংক্ষেপ:
প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে যেসব প্রভাবশালী শক্তি এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে। গাজার পরিস্থিতি বিশ্ববাসীকে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে—দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই হতে পারে স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ।