শিরোনামঃ
‘নিখোঁজ’ বৈষম্যবিরোধী নেতা মামুন পূর্বাচল থেকে উদ্ধার ক্রিকেটাররা পক্ষপাতিত্ব করে কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন: উপদেষ্টা আসিফ ৭ অক্টোবরের হামলার স্মরণে নেতানিয়াহুর আবেগঘন বার্তা পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ আর স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না: ইউনূস দুর্নীতির উদ্দেশে নেওয়া প্রকল্প অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ায় দলমত নির্বিশেষে সংস্কার এগিয়ে নেবে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস গাজায় যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প ট্রাম্প গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে চান, বললেন সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুরুর সাথে সাথে খালি জাতিসংঘের অধিবেশন কক্ষ
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

টি-ব্যাগে বিষাক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি: ভোক্তার জন্য অদৃশ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি

রেজওয়ান করিম / ৮৩ বার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশের চা সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের, প্রতিদিন কোটি মানুষ চা পান করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য—আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত জনপ্রিয় টি-ব্যাগগুলোতেই লুকিয়ে আছে বিষাক্ত ভারী ধাতু। এই ধাতুগুলো ধীরে ধীরে শরীরে প্রবেশ করে তৈরি করছে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডও) সম্প্রতি রাজধানীতে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে।

  • স্থানীয় বাজার থেকে ১৩টি নমুনা (১২টি টি-ব্যাগ ও একটি খোলা চা পাতা) সংগ্রহ করে পরীক্ষায় দেখা যায়, অধিকাংশেই আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত সীমার বহু গুণ বেশি ক্রোমিয়াম, সিসা, পারদ, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে।

  • একটি নমুনায় ক্রোমিয়ামের মাত্রা ছিল ১,৬৯০ পিপিএম, যেখানে নিরাপদ সীমা মাত্র ৫ পিপিএম।

  • সিসার উপস্থিতি ৫১ পিপিএম পর্যন্ত, পারদ ১০৮ পিপিএম পর্যন্ত এবং আর্সেনিক ১৪ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

  • কিছু টি-ব্যাগে অতিরিক্তভাবে অ্যান্টিমনি, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামও শনাক্ত হয়েছে।

    সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি

    চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধাতুগুলো দীর্ঘ সময় শরীরে গেলে দেখা দিতে পারে—

    • উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ

    • স্নায়ুরোগ ও মানসিক সমস্যা

    • লিভার ও কিডনির জটিলতা

    • বন্ধ্যত্ব এবং শিশুদের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা

    • ত্বকের ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া

    চা পানের অভ্যাস ও ভোক্তার অজ্ঞতা

    জাতীয় জরিপে দেখা যায়—

    • দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন চা পান করে

    • ৫৫ শতাংশ প্রতিদিন ২-৩ কাপ, ১৭ শতাংশ ৪ বা তার বেশি কাপ পান করে।

    • কিন্তু ৯৯ শতাংশ মানুষ জানে না যে টি-ব্যাগে এমন ধাতু থাকতে পারে।

    • ৯০ শতাংশ কখনো লেবেল বা সার্টিফিকেশন দেখে না।

    অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন অজান্তেই স্বাস্থ্যঝুঁকি নিচ্ছে।

    বিশেষজ্ঞদের মতামত

    • ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন: বিশেষজ্ঞরা একে স্পষ্ট ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন।

    • চা বোর্ড ও বিএসটিআই: তারা জানিয়েছেন, এটি উদ্বেগজনক গবেষণা, ভবিষ্যতে সরকারি ও বেসরকারি সমন্বয়ে আরও বড় আকারে পরীক্ষা প্রয়োজন।

    • পরিবেশ অধিদপ্তর: এটিকে প্রাথমিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা আখ্যা দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও গভীর গবেষণার সুপারিশ করেছে।

    • খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ: সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আরও গবেষণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছে।

    সুপারিশ ও করণীয়

    গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে—

    1. বাগান থেকে বাজার পর্যন্ত পর্যায়ে নিয়মিত চা পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ।

    2. ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ভারী ধাতু কমানোর জন্য মাটি ও কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।

    3. চা জাতীয় সব পণ্যে নিরাপত্তা লেবেল ও সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা।

    4. প্লাস্টিক ও পিইটি টি-ব্যাগ নিষিদ্ধ করা এবং নিরাপদ বিকল্প চালু।

    5. ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়াতে জাতীয় পর্যায়ে প্রচারণা।

    বাংলাদেশে প্রতিদিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চা এখন এক ভয়ংকর ঝুঁকির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। টি-ব্যাগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিষাক্ত ধাতু শুধু শরীর নয়, সামগ্রিকভাবে প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই ঝুঁকি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।


এ জাতীয় আরো খবর...