জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, তেহরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

তার এই মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি (ই-থ্রি) ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শেষ করতে যাচ্ছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর এই সময়সীমা শেষ হবে। ই-থ্রি অভিযোগ করছে, ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়েছে।

তারা জানিয়েছে, ইরান যদি জাতিসংঘ পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনঃস্থাপন করে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত নিয়ে উদ্বেগ দূর করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হয়, তবে ছয় মাসের জন্য নতুন নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখা হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জাতিসংঘ অধিবেশনে পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, “চুক্তি এখনও সম্ভব। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি আছে। ইরানের উচিত আমাদের যৌক্তিক উদ্বেগগুলোর জবাব দেওয়া।”

পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ভণ্ডামি করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে ইরানের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ছোট করে দেখাচ্ছে। তার ভাষায়, “ইউরোপীয়রা আইনি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে এবং ইরানের বৈধ পদক্ষেপকে চুক্তিভঙ্গ হিসেবে উপস্থাপন করছে।”

এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও বলেছেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ইরানের বিদেশি সম্পদ জব্দ, অস্ত্র চুক্তি স্থগিত এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কঠোরভাবে সীমিত হয়ে যাবে।

বুধবারের ভাষণে পেজেশকিয়ান আরও অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আকস্মিক হামলায় ইরানে ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হয়, যাতে বহু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি দাবি করেন, এসব হামলায় এক হাজারেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসরাইল “গ্রেটার ইসরাইল” পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে—যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাফার জোন তৈরি। পেজেশকিয়ানের মতে, ইসরাইল প্রায় দুই বছরের গণহত্যা, গণ-অনাহার ও আগ্রাসনের পরও এই পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।