দুয়েকবার কোনো কথা বা মন্তব্য থেকে সরলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কারো কারো ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে ছোঁড়া অভিযোগ থেকে সরছে না জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি। এখন পর্যন্ত দুঃখিত হয়নি। কোনো সংশোধনীও দেয়নি। এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। আলোচনা-সমালোচনার ধুমও তুঙ্গে। পর্দার আড়ালে কী ঘটতে যাচ্ছে, এ কানাঘুষা বিস্তর। মূলধারার গণমাধ্যমে নানা সংবাদ ও বিশ্লেষণ। স্যোশাল মিডিয়ায় তো অন্তহীন নেরেটিভ। সঙ্গে গুজব-গুঞ্জন। উপদেষ্টারা অনেকটা খামোশ। কী বলে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে চুপ মেরে থাকা। কারণ এ অভিযোগ করা এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম তো কারো নাম বলেননি। কাজেই প্রতিক্রিয়া দেয়া মানে ‘ঠাকুর ঘরে কে?’ অবস্থা হওয়ার ঝুঁকি।
এ অবস্থার মাঝেও পরিবেশ এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘উপদেষ্টারা সেফ এক্সিট খুঁজছে, নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য তাকেই প্রমাণ করতে হবে। উপদেষ্টাদের আর কেউ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মন্তব্য করেননি। অভিযোগ তো যেনতেন নয়। ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন, তাঁরা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছেন’- একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি এমন কথা ছুঁড়ে রীতিমতো কথার বোমা ছুঁড়েছেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তার এ বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে নানা কথা চলছে। উপদেষ্টারাও যার যার জায়গা থেকে সেফ এক্সিট নিয়ে কথা বলছেন। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা সেফ এক্সিট চাই না। স্বাভাবিক এক্সিট নিয়েই নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এই দেশেই থাকবো।’আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এখন সেফ এক্সিট নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারও কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই।’সেফ এক্সিট ইস্যুতে চলমান আলোচনা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘অনেকে অনেক কিছু বলতেই পারেন, কিন্তু প্রশ্ন তো আর থামানো যায় না।’সেফ এক্সিট। তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন বিভিন্ন উপদেষ্টা। যোগাযোগ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ব্যথিত মন নিয়ে বললেন, এমন কোনো চিন্তাই তাঁর নেই।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা ঘোষণা করেছিলেন সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি উপদেষ্টা হন। এক পর্যায়ে হন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার থেকে পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন নাহিদ।ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে যোগ দেওয়া মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখনো উপদেষ্টা রয়েছেন।
টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরো বলেছিলেন, ‘তারা কেউ সরকারের উপদেষ্টা পদে যেতে চাননি। তাদের দাবি ছিল একটি জাতীয় সরকার গঠনের । সেটা হলে ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে হতো না। রাজনৈতিক শক্তি বা অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারে না থাকলে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসও টিকত না। প্রথম ছয় মাস সরকারকে উত্খাত করা বা প্রতিবিপ্লব করার নানা ধরনের চেষ্টা চলমান ছিল। এটা এখনো মাঝেমধ্যে আছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের এবং যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাঁদের অনেককে বিশ্বাস করাটা আমাদের অবশ্যই ভুল হয়েছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্র নেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা, সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়া। নাগরিক সমাজ বা রাজনৈতিক দলকে আমরা যে বিশ্বাসটা করেছিলাম, যে আস্থা রেখেছিলাম, সেই জায়গায় আসলে আমরা প্রতারিত হয়েছি। অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছেন অথবা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিট্রে করেছেন। যখন সময় আসবে, তখন আমরা তাদের নামও উন্মুক্ত করব।’
মন্তব্য বা অভিযোগ হিসেবে মারাত্মক নাহিদের এসব কথা। তিনি তার কথায় অটল। তারওপর মানুষ অপেক্ষমান কখন তিনি ওইসব উপদেষ্টার নাম জানাবেন? সেইসঙ্গে জানাবেন তারা কে কী আখের গুছিয়েছেন? এমন অপেক্ষার মাঝে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টার মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তারা কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো। এই দায়সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না। তারা এত শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ওখানে আছেন। তারা যদি এমনটা করে থাকলে দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না। যারা এ ধরনের চিন্তা করেন, তাঁদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাক, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ধরবে।’
অভিযোগ বিবেচনায় সারজিসের কথার তেজও কম নয়। নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পাঁচ-ছয়দিন পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘উপদেষ্টারা সেফ এক্সিট খুঁজছে, নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য তাকেই প্রমাণ করতে হবে। আমি কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশেই ছিলাম, বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটাব।’ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের মতো নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সরকারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এখন সেই দলের প্রধান নাহিদ ইসলাম কী কারণে, কোন অভিমান থেকে উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বা এসংক্রান্ত মন্তব্য করেছেন, সেটি তাদের দলের মন্তব্য। তাদের অনানুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নিয়ে সরকারের পক্ষে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। ’মন্তব্য করা সম্ভব নয়’ বলে রিজওয়ানা মন্তব্য একদম কম করেনি। এ পর্যায়ে এসে নাহিদ-সারজিসদের বড় ভাই গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কয়েক উপদেষ্টার জোগসাজসের কথা বলেছেন যারা বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে দাবি তার। তার ভাষায়: “শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচজন উপদেষ্টা হাত মিলিয়েছেন। তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ সামনে আসছে। কারণ তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করছে না।”
অভিযোগ বিচারে তা আরো মারাত্মক। অভিযোগ বা মন্তব্যের এ কাতারে শামিল হয়েছেন, এখনো সরকারে থাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার কথার মার একটু ভিন্ন। ’একাধিক দেশের পাসপোর্টধারীরাই অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা কর ‘ বলে কথার মারপ্যাঁচ দিয়েছেন তিনি। নিজের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে এ মন্তব্য করে পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, যারা ৫ আগস্ট পালিয়েছিল, তাদের সিমপ্যাথাইজাররা কষ্টে মরে যাচ্ছে। বারবার ফ্যাসিস্টদেরই পালাতে হবে। আমাদের জন্ম এদেশে, মৃত্যুও এদেশের মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ। ফ্যাসিস্ট, খুনিদের সঙ্গে লড়তে লড়তে আমার ভাইদের মতো শহীদী মৃত্যু কামনা করি।
উপরোক্ত এসব কথা একসাথে করলে মানে কিন্তু ভালো দাঁড়ায় না। রীতিমত একটা উদ্বেগজনক অবস্থা। সচেতন যে কারোই প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়, উপদেষ্টারা কীভাবে ‘আখের গুছিয়েছে’, কেন ভাবছেন ‘সেফ এক্সিটের কথা? ‘অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছে’—এ কথার মাধ্যমে নাহিদ ইসলাম আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন, ওই সাক্ষাৎকারে তিনি সেটা স্পষ্ট করে বলেননি। ‘আখের গোছানো’ উপদেষ্টাদের নামও উল্লেখ করেননি। ‘আখের গোছানো’ শব্দের অর্থ সবারই বোধগম্য। প্রচলিত অর্থে ‘আখের গোছানো’ বলতে বোঝায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা হাতানো। ‘আখের গোছানো’ বলতে নিজের বা নিজের আত্মীয়স্বজন, এমনকি নিজের এলাকার জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা নেওয়াকেও বোঝানো হয়ে থাকে। কোনো কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে কাজ করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তাঁদের মধ্যে কাউকে কাউকে সরিয়ে দেওয়াও হয়েছে। দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং নুরজাহান বেগমের আলোচিত দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের অনিয়ম নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্তও করা হয়নি। পাশাপাশি সম্প্রতি এ রকম একটি বিষয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়া স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কুমিল্লার সড়ক ও অন্যান্য গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামত ও উন্নয়নে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে আসিফ মাহমুদের নিজ উপজেলা মুরাদনগরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর উপজেলা দেবীদ্বারে। (‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার কুমিল্লাপ্রীতি, নিলেন ২৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প’, সূত্র:প্রথম আলো অনলাইন, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
এসব বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? প্রশ্ন ওঠার কারণ হলো প্রথমত, এটা হচ্ছে ‘বিশেষ’ প্রকল্পের বরাদ্দ। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে। আসিফ মাহমুদ ও হাসনাত আবদুল্লাহ দুজনেই তাঁদের এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন, এলাকাবাসী তেমনটাই ধারণা করছেন। এর ফলে এই বরাদ্দের সঙ্গে তাঁদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্পর্কটি খুবই স্পষ্ট। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ক্ষেত্রে এটা শুধু ‘আখের গোছানো’, নাকি একই সঙ্গে তা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ (স্বার্থের সংঘাত)—এই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
আরেকটি উদাহরণ হতে পারে, সম্প্রতি দুটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের (টিভি) লাইসেন্স পাওয়ার ঘটনাটি। অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া নতুন দুটি টিভির একটির অনুমোদন পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান (তুহিন)। আরেকটি টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান; তিনি এনসিপির পূর্বতন সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন।
তাহলে এখন তো অভিযোগ এনসিপি ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেই। সামগ্রিক লক্ষণ ভালো নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কিছু দলের ভাগযোগের অভিযোগ আরো আগ থেকেই। রয়েছে ভাগে না মেলার অভিযোগও। নাহিদের এসব অভিযোগ,মূল্যায়ণ বা অভিমতের আগে এমন বোমা ফাটানোর জেরে আরেক আউলাঝাউলা বেধেছে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যে। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, কাড়াকাড়ি করে প্রশাসনে লোক নিয়োগ করিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। নিয়োগের আগে তারা সংস্কারের জন্য সরকারকে যত সময় লাগে দেওয়ার পক্ষে ছিল। তবে নিয়োগ শেষ হওয়ার পরপরই ডিসেম্বর মাস থেকে তারা অসহযোগ শুরু করে দিয়েছে। মাহফুজ আরো যোগ করলেন: ‘বাংলাদেশে সবাই গোষ্ঠীস্বার্থের জন্য কাজ করে। জাতীয় স্বার্থ দেখে না। সামগ্রিকভাবে কোন জিনিসটা করলে একটা ভালো আইন পাওয়া যাবে, ভালো একটা নীতি পাওয়া যাবে সে বিষয়ে কেউ আগ্রহী না। আর আমলারা আছেন পরের সরকারের অপেক্ষায়। তিনি যে যে বিষয়ের উপর আলোকপাত করলেন, তার সারসংক্ষেপ মোটামুটি এই রকম- ২০২৪ এর ৫ আগষ্টের পর সপ্তাখানেকের মধ্যেই দেশের প্রশাসন,বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি,আইনের জায়গাগুলো বিএনপি- জামায়াত ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এরপর প্রফেসর ইউনুস ক্ষমতা নেবার পর যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন আর মন্ত্রীর মর্যাদায় সহকারী নিয়োগ করেন, তাতে নিজস্ব পরিচিত ব্যক্তি আর ঘরানার লোকেদেরই জায়গা হয়েছে।
এ অবস্থায় এক মাস ধরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল যে ছাত্র উপদেষ্টারা নেমে যাবেন। ফলে ছাত্র উপদেষ্টাদের দপ্তর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে এক মাস ধরে। সেখানে কাজ শ্লথ হয়ে গেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা ছিল, সে অনুসারে কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন মাহফুজ আলম। তিনি আর ক’দিন এ চেয়ারে থাকতে পারবেন, তার এমন তথ্যে আউলাঝাউলা বা ভজঘট আরো পেকেছে। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো উপদেষ্টার নাম তারা এখনই না বললেও তারা মনে করেন, এই উপদেষ্টা পরিষদই জনমানুষের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ঘোষণা হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভোটের আগে এই প্রশ্নগুলো নতুন করে সংকট তৈরি করতে পারে, এই উপদেষ্টাদের তো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা উচিত। সেক্ষেত্রে সেফ বা আনসেফ এক্সিটের প্রশ্ন কেন উঠবে। এখানে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা থাকলে বা কোনো দূর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেগুলোর জন্য বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকদের মতোই তাদের বিচারের আওতায় আনা যেতে পারে।তাছাড়া যেই ছাত্র নেতৃত্বের পরামর্শ রেখেই এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তারাই কেন উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে অভিযোগ তুলছে সেই প্রশ্নও সামনে আসছে।
পরিশেষে,নাহিদ ইসলাম কি ‘নিজেদের আখের গোছানো’ এবং ‘সেফ এক্সিট’ নিতে চাওয়া উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশ করবেন? বিষয়টি এখন শুধু নাহিদ ইসলাম-সারজিস আলম অর্থাৎ এনসিপির আর উপদেষ্টাদের মধ্যকার ‘দ্বিপক্ষীয়’ কোনো বিষয় নয়; দেশের রাজনীতিসচেতন মানুষেরাও এতে ইনভলভ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা আসল ঘটনাটা জানতে চান। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে ‘নিজেদের আখের গোছানো’ এবং ‘সেফ এক্সিট’ নিতে চাওয়া সবার নাম দ্রুতই প্রকাশ করা হবে—এটাই প্রত্যাশা।