১১ নভেম্বর— ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। ১৯১৮ সালের এই দিনে জার্মানির আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় মানবসভ্যতার ভয়াবহতম সংঘাতগুলোর একটি— প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। দিনটিকে স্মরণে রেখে ফ্রান্সসহ ইউরোপজুড়ে পালিত হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান দিবস, যা ‘আর্মিস্টিস ডে’ (Armistice Day) নামেও পরিচিত।
রাজধানী প্যারিসে Arc de Triomphe (আর্ক দ্য ত্রিওঁফ)-এর নিচে অবস্থিত অজ্ঞাত সৈনিকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ। স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় সারাদেশে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়— সেই মুহূর্তটির স্মরণে, যখন ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর সকাল ১১টায় থেমে গিয়েছিল যুদ্ধের কামানের গর্জন।
এই দিনে ফরাসি নাগরিকরা বুকে ধারণ করেন নীল রঙের ছোট ফুল Bleuet de France (ব্লুয়ে দ্য ফ্রঁস)— যা নিহত ও আহত সৈনিকদের স্মরণে শান্তি ও ঐক্যের প্রতীক। দেশজুড়ে স্কুল, সামরিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও স্মৃতিচারণমূলক নানা আয়োজন।
১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলা এই চার বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ হারান প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ, আহত হন আরও কয়েক কোটি। যুদ্ধ শেষে পতন ঘটে জার্মান, রাশিয়ান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি ও উসমানি সাম্রাজ্যের। পরবর্তীতে ভার্সাই চুক্তির (Treaty of Versailles) মাধ্যমে জার্মানিকে নিরস্ত্র করে দেওয়া হয় এবং গঠিত হয় লীগ অব নেশন্স (League of Nations), যার বর্তমান রূপ জাতিসংঘ।
আজও ফ্রান্সজুড়ে ঘণ্টাধ্বনি, প্রার্থনা ও শ্রদ্ধাঞ্জলির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হচ্ছে সেই ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান এবং শান্তির সূচনা। ১১ নভেম্বর আজও মানবতার বিজয় ও বিশ্বশান্তির প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে।