বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি এক ভিন্ন মোড় নিচ্ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে। ভারত ও রাশিয়া মস্কোতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপে নিজেদের কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে।
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু। উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক আইনের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার এবং সমতা-ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গঠনের অঙ্গীকার করেছেন। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফর হতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ভারতীয় অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করার সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর এই শুল্কের ফলে ভারতীয় পণ্যের মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে পৌঁছে যাবে, যা দেশটির বৃহত্তম রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার বিঘ্নিত করতে পারে।
এই বড় পরিবর্তনের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফরের খবর শোনা যাচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি, বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে যে তিনি দুই দিনের একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের একচেটিয়া বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে ভারত, রাশিয়া ও চীনের ঘনিষ্ঠতার সম্ভাবনা একটি বিকল্প শক্তির জন্ম দিতে পারে। এই নতুন ব্লক বিশেষ করে BRICS জোটকে কেন্দ্র করে একটি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বলয়ের রূপরেখা তৈরি করতে পারে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলবে।
সর্বশেষে, দেখা যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির এই নতুন মেরুকরণ কেবল ভারত, রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সহায়ক হবে না, বরং এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক রাজনীতির গতিরেখাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারে। ভবিষ্যতে এই পরিবর্তনের কি প্রভাব পড়বে, তা পর্যবেক্ষণের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব।