কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্রুতগতিতে অফিসের কাজগুলোকে বদলে দিচ্ছে। রিপোর্ট লেখা, ডেটা অ্যানালাইসিস, এমনকি কাস্টমার সার্ভিসের মতো অনেক হোয়াইট-কলার চাকরিই এখন AI দিয়ে সহজে করা সম্ভব। এর ফলে মানুষ চাকরির অনিশ্চয়তায় পড়ছে, বিশেষ করে যারা ডেস্ক-ভিত্তিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এআইয়ের এই উত্থান ব্লু-কলার চাকরিকে আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
ব্লু-কলার চাকরিকে বলা হয় শারীরিক পরিশ্রমভিত্তিক কাজ, যেমন—ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, মেকানিক, কার্পেন্টার, নির্মাণকর্মী কিংবা ফ্যাক্টরি শ্রমিক। সাধারণত এসব কাজে হাতে-কলমে দক্ষতা প্রয়োজন, আর এই ধরনের কাজকে সহজে অটোমেশন বা AI দিয়ে প্রতিস্থাপন করা কঠিন।
AI প্রতিস্থাপন কঠিন – একজন ইলেকট্রিশিয়ান বা প্লাম্বারের কাজ করতে রোবটকে শারীরিকভাবে মাঠে গিয়ে কাজ করতে হবে। এটা প্রযুক্তিগতভাবে ব্যয়বহুল ও জটিল।
চাহিদা বাড়ছে – অবকাঠামো উন্নয়ন, গৃহনির্মাণ, বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিল্প-কারখানায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
চাকরির নিরাপত্তা – অফিসের অনেক কাজ এখন AI-চালিত টুলস দিয়ে করা সম্ভব হলেও ব্লু-কলার চাকরির ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
ভালো আয়ের সম্ভাবনা – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে দক্ষ ট্রেড কর্মীরা ভালো বেতন পাচ্ছেন, অনেক সময় তা অফিসের চাকরির চেয়েও বেশি।
পূর্বে ব্লু-কলার চাকরিকে হোয়াইট-কলার চাকরির চেয়ে ‘কম মর্যাদাপূর্ণ’ ভাবা হতো। কিন্তু AI বিপ্লব সেই ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে—যেখানে অফিসকর্মীরা তাদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তায়, সেখানে একজন মেকানিক বা প্লাম্বার তার কাজ নিয়ে অনেক বেশি নিরাপদ।
বাংলাদেশের মতো দেশে ব্লু-কলার চাকরির গুরুত্ব আরও বেশি। নির্মাণশিল্প, গার্মেন্টস, বিদ্যুৎ, কৃষি, পরিবহন—সবখানেই দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। AI যেখানে মূলত হোয়াইট-কলার চাকরিতে প্রভাব ফেলছে, সেখানে ব্লু-কলার খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে দেশ নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
এআই হয়তো অনেক অফিসকাজ প্রতিস্থাপন করবে, কিন্তু মানবশ্রমের চাহিদা শেষ হবে না। বরং ব্লু-কলার চাকরির গুরুত্ব নতুনভাবে বেড়ে উঠছে। ভবিষ্যতের কর্মবাজারে বেঁচে থাকতে হলে শুধু হোয়াইট-কলার নয়, ব্লু-কলার দক্ষতাকেও সমানভাবে মূল্য দিতে হবে।