প্রতি বছরের মতো এবারও ১ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে এ সপ্তাহ পালন শুরু হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য—“স্তন্যদুগ্ধই শিশুর প্রথম টিকা: সুস্বাস্থ্য ও টেকসই ভবিষ্যতের ভিত্তি”—বাংলাদেশেও এ উপলক্ষে নানা আয়োজন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশে এখনও অনেক মা-ই শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান করান না, কিংবা ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার দেন না। যদিও ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধই যথেষ্ট, তবু নানা সামাজিক কুসংস্কার, তথ্যের অভাব, কর্মজীবী মায়েদের কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব এসব বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাতৃদুগ্ধে থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার উপাদান, যা শিশুকে নানা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ডায়রিয়ার মতো মারাত্মক অসুখ থেকে রক্ষা করে। এটি শিশুর বুদ্ধি ও শারীরিক বিকাশেও সহায়ক।
বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে একটি জাতীয় মাতৃদুগ্ধ নীতি গ্রহণ করে এবং ২০১৩ সালে ‘বেবি ফ্রেন্ডলি হাসপাতাল ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করে। বর্তমানে কিছু সরকারি হাসপাতালে ‘মায়ের কক্ষ’ স্থাপন করা হয়েছে যেখানে কর্মজীবী মায়েরা শিশুকে স্তন্যদান করতে পারেন।
তবে বাস্তব চিত্র এখনো চ্যালেঞ্জিং। অধিকাংশ বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে নেই মাতৃসুবিধা বা স্তন্যদানের উপযুক্ত পরিবেশ। অনেক মা বাধ্য হয়ে বিকল্প দুধের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মজীবী মায়েদের জন্য পেইড মাতৃত্বকালীন ছুটি, স্তন্যদানের কক্ষ এবং সঠিক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারলেই মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্দেশ্য সফল হবে। একই সঙ্গে পুরুষদের অংশগ্রহণ, পরিবারে সহমর্মিতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ইউনিসেফের পক্ষ থেকে মা-বাবাদের প্রতি অনুরোধ—শিশুর সুরক্ষার জন্য প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ দিন এবং দুই বছর পর্যন্ত পাশাপাশি নিয়মিত খাদ্য ও মাতৃদুগ্ধ চালিয়ে যান।
মাতৃদুগ্ধ শুধুই পুষ্টিকর নয়—এটি শিশুর ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতীক।